বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন আর নারী ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ৮৩৭ জন ভোটার রয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ কোটি নাগরিকের মধ্যে প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে।
এই ১২ কোটি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট এনআইডি রয়েছে ইসির হাতে। আর এই এনআইডি ছাড়া একজন নাগরিকের সরকারি বা বেসরকারি কোনো সেবা নেওয়া অসম্ভব। এবার নাগরিকদের এনআইডি তথ্যভাণ্ডারের ডিজিটাল নিরাপত্তা দিতে নিজস্ব জনবলের সমন্বয়ে ‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসির গঠিত এই টিম কারিগরি সদস্যদের নিয়ে গঠিত। এ টিম সাইবার হামলা হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে এবং সাইবার হামলা রোধেও উদ্যোগ নেবে। এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম এনালিস্টকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্য ও একজন সদস্য সচিব নিয়ে মোট আট জনের ‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে বিষয়টি অবহিত করেছে ইসি সচিবালয়।
গত ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে বাংলাদেশের সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের সংরক্ষিত জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর হয় ইসি।
৯ জুলাই সাংবিধানিক সংস্থাটির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ‘অনলাইনে এনআইডি সংক্রান্ত অবৈধ অ্যাপস/সফটওয়্যার ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও মনিটরিং’ কমিটির সভা করে। এরপরই ১৩ জুলাই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা/বিভাগের প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করে। এ সভায় ইসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ১৭১টি পার্টনার সার্ভিস অর্গানাইজেশনের কার্যক্রম তদারকি ও আইটি অডিটের পরামর্শ আসে। নিজস্ব কারিগরি দক্ষ জনবল নিয়ে আলাদা ইউনিট করারও সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
একই সঙ্গে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়। নাগরিকদের তথ্য ফাঁসের বিষয়ে ১১ জুলাই সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালককে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরইমধ্যে ১৫ আগস্ট সামনে রেখে ৩১ জুলাই একটি ‘উগ্রপন্থি’ হ্যাকার গ্রুপের তরফ থেকে বাংলাদেশে সাইবার হামলার হুমকি আসে। এ শঙ্কায় ৪ আগস্ট সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট) সতর্কতা জারি করে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সুরক্ষিত জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিতে ইসির কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করা হলো।
কারা আছেন এবং কী কাজ করবে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিস্টেম এনালিস্ট আক্তারুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমে আরও রয়েছেন- উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডেটাবেজ) মেজর মো. মামুনুর রশীদ, রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহাগ, প্রোগ্রামার মো. সিরাজুল ইসলাম, নেটওয়ার্ট কনসালট্যান্ট মো. শওকত আকবর মুন্সি, ডেটাবেজ কনসালট্যান্ট টিপু সুলতান, সহকারী প্রোগ্রামার নুসরাত জাহান উর্মি এবং সহকারী প্রোগ্রামার আমিনুল ইসলাম।
কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে নির্বাচন কমিশনের জরুরি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সাইবার বা ডিজিটাল হামলা হলে এবং সাইবার বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। সম্ভাব্য ও আসন্ন সাইবার বা ডিজিটাল হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে এ টিম। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকারের অনুমোদন গ্রহণক্রমে, সমধর্মী দেশি/বিদেশি কোনো টিম বা প্রতিষ্ঠানের সাথে তথ্য আদান-প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কাজ।