সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরাজ করছে ধীরগতি। কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন না হওয়ায় সার্বিকভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। ফলে চলতি অর্থবছরের চার মাসের মাথায় এসে এডিপি কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বৈদেশিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংশোধিত এডিপি তৈরির জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এরপরই আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজ বৈঠক। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে নতুন বরাদ্দ নির্ধারণ করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফা কে. মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। প্রকল্প তৈরি, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন সব পর্যায়ে এই দুর্বলতা প্রকট। ফলে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করতে পারে না। এছাড়া দেশীয় অর্থ ব্যবহার করা যতটা সহজ, বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করা অতটা সহজ নয়। এখানে যারা ঋণ বা সহায়তা দেয় তাদের নানারকম শর্ত থাকে। কঠোর তদারকি থাকে। নয়ছয় করার সুযোগ কম থাকে। ফলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো দেশীয় অর্থ ব্যবহারে যতটা আগ্রহী থাকে বৈদেশিক অর্থের ক্ষেত্রে সেটি থাকে না।
সূত্র জানায়, ১১ অক্টোবর বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং সিনিয়র সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি তৈরির জন্য সব চলমান এবং অনুমোদিত নতুন প্রকল্পের বৈদেশিক সহায়তা অংশের প্রাক্কলন নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় বা বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর নির্ভর করা হবে। আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যেই তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কেবল কিছু কিছু প্রকল্পের হিসাব পাওয়া শুরু হয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে সবগুলো তথ্য পেলে আগামী ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করা হবে। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে সবকিছু নির্ধারণ করে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। সেখানেই পুরো এডিপি সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এদিকে চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এডিপির আওতায় বৈদেশিক সহায়তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে ধীরগতি বিরাজ করছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় টাকার অঙ্কে ব্যয় বাড়লেও মোট বরাদ্দের তুলনায় কমেছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মোট এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। কিন্তু গত তিন মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ১৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা অংশে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের তিন মাসে ব্যয় হয়েছিল ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এদিকে অর্থবছরের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ১ শতাংশের নিচে বৈদেশিক অর্থ খরচ করেছে ৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে এক টাকাও খরচ করেনি চারটি। এগুলো হলো-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ব্যয় করেছে শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ খরচ করতে পেরেছে।