মাঝে দুইদিন ঘরে খাবার ছিল না। শুধু ভাত রান্না করে আলু ভর্তা দিয়ে খেতে হয়েছে। সদ্য বিয়ে করে স্ত্রীকে ঢাকায় এনেছি। যে পরিমাণ বেতন পাই তা দিয়ে বাজার মূল্য সমন্বয় করা অত্যন্ত কঠিন। যে আয় তা দিয়ে আগে ৩৫-৪০ দিন চলা যেত। এখন ১৫-২০ দিন চলাও কষ্টকর। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলতে হচ্ছে একটু ভাবুন।
বাজার করতে রাজধানীর মেরাদিয়া বাজারে এসে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো ঢাকা মেইলকে বলছিলেন বনশ্রী এলাকার বোরহান আকন্দ।
বোরহান বলেন, ‘অভাব অনেক, বলার জায়গা নেই। বই-খাতা, ওষুধ থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে। বাজারের সবচেয়ে কমদামি পাঙ্গাস আর তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। খাবার যোগান দিতেই আয়ের সব অর্থ শেষ। আগে সমস্যা হলে প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের সহযোগিতা পাওয়া যেত। এখন কেউ কাউকে সহযোগিতা করতে পারছে না।’
তার পাশেই থাকা আরেকজন কাউসার আলম। পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও আয় বাড়েনি। উল্টো চাকরির ঝুঁকি বাড়ছে। ঘরে দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়েটা ভালো রেজাল্ট করলেও টাকার অভাবে কোচিংয়ে ভর্তি করতে পারিনি। কখনও এত সংকটে পড়তে হয়নি। টাকার অভাবে এখন মোটা চাল কিনে খাচ্ছি, মাছ-মাংস কিনব কিভাবে। আলু ভর্তা ডাল ভাত খেতেই সব টাকা শেষ হচ্ছে।
তারা আরও জানান, গরিবদের খাবারে আমিষের যোগান কমেছে। ডিম-পাঙ্গাসের ওপর ভরসা বহু পরিবারের। তবে সেই পথও এখন ক্ষীণ, কারণ নতুন করে দাম বাড়ছে ডিমেরও। একহালি ডিম কিনতে লাগছে ৫০ টাকা। মধ্যবিত্তদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য উল্লেখযোগ্য ছিল তারাও এখন পথে বসার দ্বারপ্রান্তে।
তথ্যমতে, বাজারে মাছের মধ্যে সবচেয়ে কম দাম ছিল পাঙ্গাস মাছের। যা এখন কিনতে হলে গুনতে হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এছাড়াও বেড়েছে সব মাছের দাম। প্রতি কেজি কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, পাবদা ৪৫০ টাকা, মলা ৩৬০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কৈ ২৬০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, টেংরা (ছোট) ৫০০ আর বড় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, একইভাবে বাঁধাকপিও প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, ব্রকলি প্রতি পিস ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৩০, খিরা প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ফুলকা প্রতি আটি ১৫-২০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পটল প্রতি কেজি ১২০ টাকা, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত ৭ বছর থেকেই ইলেক্ট্রিশিয়ান পেশায় কাজ করছেন মানিক মিয়া। তার জীবনযাবন কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, সংসারেও এক ছেলে এক মেয়ে। বর্তমানে সব রকম ব্যবসায় মন্দা অবস্থা। দোকান-বাসাভাড়া দিয়ে প্রতিদিনের বাজার খরচ যোগাতে কষ্ট হচ্ছে। মূলত খাবার কিনতেই সবচেয়ে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। একদিন ভালো কিছু বাজার করতে গেলে পুঁজি ভাঙতে হচ্ছে। শখ করেও ভালো কিছু খেতে পারছি না। চোখের সামনে সব কিছু বদলে যাচ্ছে। প্রতিদিন সবকিছুর দাম বাড়ছেই।”
এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানিয়েছে, চাল, সবজি, বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ প্রায় সমস্ত ভোগ্যপণ্য ও সেবার দাম বাড়ায় এক বছরের ব্যবধানে সার্বিকভাবে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১১ শতাংশ।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের উপার্জনের ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্য কিনতে। অনেক সময় খাবার কম কিনে অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হয় তাদের। ফলে সেসব পরিবারের সদস্যদের ভুগতে হচ্ছে অপুষ্টিতে।