২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসীর আগমন ঘটেছে যুক্তরাজ্যে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের (ওএনএস) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ব্রিটেনে এসেছেন ৬ লাখ ৬ শ’রও বেশি মানুষ।
এরা সবাই যুক্তরাজ্যে বসবাসের বৈধতা নিয়ে এসেছেন, অর্থাৎ বৈধ অভিবাসী। দেশটির ইতিহাসে এর আগে এক বছরে এত সংখ্যক অভিবাসী আগমনের তথ্য নেই বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ওএনএস।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে ওএনএসের পরিচালক জে লিনডপ বলেন, ২০২০ সালের পর থেকেই যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আগমনের হার বাড়ছিল, তবে তাতে উল্লম্ফন শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেন থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ অভিবাসন বৈধতা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছেন বা যুক্তরাজ্যে আসার পর থাকার অনুমতি নিয়েছেন।
এছাড়া গত বছর হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী ও চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারেরর বিরোধীদের জন্য ভিসানীতি সহজ করেছিল যুক্তরাজ্যের সরকার। ফলে হংকং থেকেও দেশটিতে গিয়েছেন প্রচুর অভিবাসী।
এদিকে, পরিসংখ্যান দপ্তরের সাম্প্রতিক এই তথ্যে স্বাভাবিকভাবেই চাপে পড়েছেন ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম আইটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈধ অভিবাসনের হার অতিরিক্তমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি এটা কমাতে চাই এবং এ মুহূর্তে এটাই আমার জন্য জরুরি কাজ।’
ব্রিটেনের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ২০১১ সাল থেকে গুরুত্ব পাওয়া শুরু করে অভিবাসন ইস্যুটি। ব্রিটেনের জনগণদের একাংশের অভিযোগ ছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের কারণে তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই অভিযোগটিকে মূল নির্বাচনী ইস্যু আকারে হাজির করেই ২০১১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি। ২০১৬ সালে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসে ব্রিটেন, তার পেছনেও কাজ করেছে এই অভিবাসন ইস্যু। কনজারভেটিভ পার্টির অভিযোগ ছিল, আন্তরাষ্ট্রীয় এই জোটের সুবিধা নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
তারপর ২০১৯ সালের নির্বচনী ইশতেহারে অভিবাসীদের বাৎসারিক আগমন ১ লাখে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি। যুক্তরাজ্যের অভিবাসনমন্ত্রী রবার্ট জেনেরিক বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আপাতত অভিবাসীদের আগমনের হার মহামারিপূর্ব পরিস্থিতির মতো করার দিকেই মনযোগ দিচ্ছে বর্তমান সরকার।