জমজমাট এক ফাইনালের অপেক্ষায় ছিল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। আগের দুই ম্যাচেই ছিল নাটকীয়তা। শেষ ওভার পর্যন্ত গড়িয়েছিল ম্যাচ। ফাইনাল ঘিরে তাই প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু, সেই আশায় যেন জল ঢেলে দিলেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। হায়দ্রাবাদের এই পেসারের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে ভারত তুলে নিয়েছে সহজ এক জয়।
ফাইনালে রানের বন্যা দেখা না গেলেও রেকর্ড হয়েছে বিস্তর। এক ম্যাচেই অন্তত ৮টি রেকর্ড দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। যার মধ্যে চারটি রেকর্ড সিরাজের একার। তার এই রেকর্ড গড়ার দিনে ভারতের জয় এসেছে ১০ উইকেটে।
নিজের প্রথম ওভারেই চার লঙ্কান ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন সিরাজ। আর তখনই প্রথম রেকর্ডবইয়ের নিজের নাম তুলেছেন তিনি। এক ওভারে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে সিরাজ চতুর্থ।
বল বাই বল ডেটা হিসেবে দ্রুততম ৫ উইকেটের মালিক এখন সিরাজই। তবে এই রেকর্ডও তার একক নয়। লঙ্কান পেস কিংবদন্তি চামিন্দা ভাসের রেকর্ড ছুঁয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। আজ ১৬ বলের মধ্যেই ৫ উইকেট নিয়েছেন ভারতীয় পেসার। ভাস ১৬তম বলে পঞ্চম উইকেটটি নিয়েছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এশিয়া কাপের সেরা বোলিং ফিগারেও আছে সিরাজের নাম। ২০০৮ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই ১৩ রান ৬ উইকেট নিয়েছিলেন লঙ্কান রহস্যময় স্পিনার অজন্তা মেন্ডিস। এবার সেই একই মঞ্চে লঙ্কান ব্যাটারদের বিপক্ষে কীর্তি গড়লেন সিরাজ। যেখানে তার বোলিং ফিগারটাও ১৩ রানে ৬ উইকেট।
প্রথম দশ ওভারে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার তালিকাতেও নিজেকে সবার উপরে নিয়ে গিয়েছেন এই পেসার। দশ ওভারের মাঝে আজ ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে ৪ উইকেট ছিল জাভাগাল শ্রীনাথ, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রীত বুমরাহর।
সিরাজের এমন রেকর্ডময় দিনে এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের কীর্তি গড়েছে লঙ্কান ব্যাটাররা। আর তাতে লজ্জার এক রেকর্ড থেকে বেঁচে গিয়েছে বাংলাদেশ। আজকের ফাইনালের আগ পর্যন্ত এশিয়া কাপে দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর ছিল বাংলাদেশের। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সে রেকর্ড ভাঙল শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপের ফাইনালের ক্ষেত্রে অবশ্য আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৭৩ রানের। সেটাও ভারতেরই করা, এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। এবার লঙ্কাকে ৫০ রানে আটকে যেন সেই ইতিহাসের বদলা নিল ম্যান ইন ব্লু-রা।
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ১৯৮৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৫ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। এতদিন সেটিই ছিল দ্বিতীয় স্থানে। সর্বনিম্ন স্কোর অবশ্য ৪৩। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কীর্তি গড়ে ছয়বারের এশিয়া কাপ জয়ীরা। আবার ভারতের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডও এটি।
লো স্কোরিং এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছে ৫০ রানে। ভারত ম্যাচ জিতেসে অনায়াসে। ১০ উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটি। এশিয়া কাপের ফাইনালে উইকেটের হিসেবেও এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে যেকোন ধরনের আন্তর্জাতিক ফাইনাল ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে জয়ের রেকর্ড এটি। ভারত আজ ২৬৩ বল হাতে রেখে জয় তুলে পেয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৬ বল হাতে রেখে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
এছাড়া ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বনিম্ন বলে শেষ হওয়া ম্যাচ। এর আগে ২০২০ সালে নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওয়ানডে ম্যাচ ১০৪ বলে শেষ হয়েছিল।