সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া দুই নারীকে গণমাধ্যমে ‘মডেল’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ায় বিবৃতি দিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ। তারা বলছে, ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দু-একটা বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি-না, সেই ভাবনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ সময় কাটানোর জন্য সামাজিক মাধ্যমে, ঘরোয়াভাবে তৈরি ভিডিওতে অভিনয় করছেন। মডেল হিসেবে হয়তো বাসার পাশের কোনো টেইলরের দোকানে বা একটা–দুটো বিলবোর্ডে ছবি আছে, সেও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে অ্যাক্টর বা মডেল দাবি করছে।’
‘হুট করে এসে কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠে, তা–ও না। তেমন ঘটনাও আছে। কালচারাল অ্যাকটিভিস্ট, বিনোদন জগতের স্টেকহোল্ডার, মডেল বা অভিনেত্রী তকমা নেয়ার ও দেয়ার আগে, তার কাজ, কাজের প্রতি আগ্রহ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচ্য হওয়া জরুরি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মডেল বা অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন। শতভাগ একাগ্রতার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরও ভালো কাজের জন্য, শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, অভিজ্ঞ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তার আগ্রহ ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দেন। তাদের চেষ্টাকে গাইড করে, তার মধ্যে শিল্পী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। বাংলাদেশের এমন প্রচুর অভিনয়শিল্পী ও মডেল তাদের কাজ দিয়ে সম্মান অর্জন করেছেন, পরিবারের জন্য গর্ব হয়েছেন, পেয়েছেন মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, সামাজিক ও জাতীয় স্বীকৃতি, হয়েছেন কোটি মানুষের আদর্শ।’
‘কোথাও পুলিশি অভিযানে ধরপাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হেডলাইন হয় অমুক মডেল বা অভিনেতা-অভিনেত্রী গ্রেফতার, যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় সংবাদ। এ ধরনের হেডলাইন, সর্বজনশ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেলসহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত সবার জন্য সামাজিকভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর ও অসম্মানজনক হয়ে ওঠে।’
‘যারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ করেন, তাদের প্রায়ই আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে শুনতে হয়, “দেখলাম তোমাদের এক মডেল/অভিনেতা এই করেছে”—এ রকম শ্লেষাত্মক কথা। এছাড়া এই পেশার মানুষ সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা ও অসম্মান তৈরি হয় সমাজে, যা হয়ে উঠতে পারে অপ্রত্যাশিত সোশ্যাল ট্যাবু। গণমাধ্যম কাকে অভিনেতা, অভিনেত্রী বা মডেল বলবে, তার ওপরই নির্ভর করে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না? এত এত সম্মানিত ব্যক্তি নানান প্রতিকূলতার মধ্যে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিশ্রমী এবং ভবিষ্যতে বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে উদ্গ্রীব নতুন প্রজন্ম।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তাদের এই রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হতে হয়, সেটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিশ্চিত করার দায়িত্ব অনেকটাই আপনাদের। তাই গণমাধ্যম যখন হেডলাইন করবে, সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তার নিষ্ঠা ও তার অবদান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে পেশা উল্লেখ করবে, এটাই প্রত্যাশিত।’
অভিনেত্রী জয়া আহসানসহ একাধিক শিল্পী অভিনয় শিল্পী সংঘের এই লিখিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।