শ্রুতিলেখক নিয়ে যাদের নিয়োগ ও একাডেমিক পরীক্ষা দিতে হবে তারা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক চতুর্থাংশ সময় বেশি পাবেন। নিয়োগ ও একাডেমিক পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে। ওই খসড়ায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
নীতিমালায় প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রুতিলেখকদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করা হচ্ছে। রোববার (২০ মার্চ) সংসদীয় কমিটির বৈঠকে খসড়াটি উপস্থাপন করা হয়েছে। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নীতিমালা প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শ্রুতিলেখকের বিধান চালু থাকলেও প্রতিটি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পদ্ধতিতে এটা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানভেদে শ্রুতিলেখক নিয়োগের বিষয়টি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় প্রতিবন্ধীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যে কারণে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খসড়া নীতিমালা থেকে জানা গেছে, এতে একাডেমিক ও নিয়োগ শ্রুতিলেখকের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ সময় বেশি পাবেন। অর্থাৎ, প্রতি ঘণ্টা সময়ের বিপরীতে ১৫ মিনিট সময় অতিরিক্ত পাবে। এক ঘণ্টার কম সময়ের পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় হবে আনুপাতিক হারে। তবে অতিরিক্ত সময় পাঁচ মিনিটের কম হবে না।
যে সকল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখকের প্রয়োজন হয় না তবে ধীরগতিতে নিজহাতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে তারাও একই হারে অতিরিক্ত সময় পাবে।
প্রতিবন্ধী না হলেও আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেউ নিজ হাতে লিখতে অপারগ হলে শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে চাইলে সিভিল সার্জন প্রদত্ত চিকিৎসা সনদ প্রদর্শন করে পরীক্ষা দিতে পারবে।
শ্রুতিলেখকদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, পিএসসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) ও জেএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর চেয়ে একশ্রেণি নিচে অধ্যয়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী; এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে জেএসসি পাস বা নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী; এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে এসএসসি পাস বা একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী; স্নাতক বা ডিগ্রির ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর একশ্রেণির নিচে এবং বিভিন্ন বিভাগে অধ্যায়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় ও কলেজসমূহে তাদের সাময়িকসহ অন্যান্য একাডেমিক পরীক্ষার শ্রুতিলেখকের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবে।
এদিকে সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের চাকরির নিয়োগের পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চেয়ে এক গ্রেড বা একধাপ কম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন হবে বলে এতে বলা হয়। এছাড়া বিএড/বিপিএডসহ প্রফেশনাল কোর্সের ক্ষেত্রে উক্ত প্রফেশনাল কোর্স করেনি এমন যেকোনো সময় শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী শ্রুতিলেখক হতে পারবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, একাডেমিক ও চাকরির ক্ষেত্রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে শ্রুতিলেখক সংগ্রহ করবেন। এক্ষেত্রে একাধিক শ্রুতিলেখককে মনোনয়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। যাতে কেউ অসুস্থ হলে অপরজন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
শ্রুতি লেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ হিসেবে মনোনয়নের সময় জমা দিতে হবে।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রুতিলেখক নিয়োগে অসহযোগিতা করার বিষয় প্রমাণিত হলে তা জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে।