সারাদেশে চলছে গণহারে মামলা, কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এখন থেকে মামলা হলে গ্রেফতার করা হবে না। প্রথমে তদন্ত হবে, তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবুও গ্রেফতার থেমে নেই।
পুলিশের আইজি মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, ‘যে কেউ হয়রানির শিকার হবেন না, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দফতর মামলাগুলোর মনিটরিং করছে। শুধু অপরাধীরাই আইনের হাতে ধরা পড়বে।’
পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে— ৫ আগস্টের পর থেকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সারাদেশে ১ হাজার ১৩টি মামলা হয়েছে। তবে, কতজন আটক হয়েছেন তার হিসেব নেই। এসব মামলার অধিকাংশই হত্যা সংক্রান্ত, তবে কিছু মামলায় হামলা, ভাঙচুরসহ অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে।
মামলাগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে। গণহত্যা ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় এমন কিছু সেলিব্রেটিও রয়েছেন যারা শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বা হত্যার প্রতিবাদ না করে নীরব ছিলেন।
এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ১৫৭টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন নেতাকর্মীও আসামি হয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ৩৮৮টি মামলা হয়েছে। তবে এই মামলার সারি ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে, আসামি হচ্ছেন অনেকে।
৩০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মামলা হওয়া মানে যত্রতত্র গ্রেফতার নয়। অতি উৎসাহী ও স্বার্থান্বেষী মহল মামলা গ্রহণে পুলিশের ওপর চাপ দিচ্ছে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, ‘মামলার এজাহারে নাম থাকলেই গ্রেফতার করা হবে এমন নয়। কালেক্টিভ তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের আইজি মো. ময়নুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মামলা হয়েছে, কিন্তু আমরা মামলাগুলো ক্লোজ মনিটরিং করছি। রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ অফিসারসহ যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্য ও ভিডিওর ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে অপরাধীদের ধরব এবং কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করব।’
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘মামলা নেওয়ার আগে পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত করা উচিত। গণহারে হত্যা মামলা বন্ধ করতে হলে এটি করতে হবে। গণহত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ অপরাধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা উচিত। ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হলে মামলার মেরিট নষ্ট হতে পারে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক মনে করেন, ‘পুলিশ বলছে, মামলার পর তদন্ত করে গ্রেফতার করা হবে, যা একটি ভালো লক্ষণ। তবে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা অপরাধী নন, তারা আদালতের মাধ্যমে খালাস পাবেন। গণহত্যা, দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ অপরাধের মামলাগুলো করতে একটু সময় লাগতে পারে। আমি সবসময় গণহারে মামলার বিরোধী। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অন্যদিকে, সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে। তারা অভিযুক্ত সাংবাদিকদের অব্যাহতির আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সাংবাদিকরা অপরাধ করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পেশাদারিত্ব বাদ দিয়ে নীতিবিবর্জিত সাংবাদিকতা গ্রহণযোগ্য নয়।’