নিজের ভুল ঢাকতে সাংবাদিকদের দুষলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার দাবি, কোনো কাজ করলে একমাত্র সাংবাদিকরা বাধা সৃষ্টি করে থাকেন। তাই গণমাধ্যমে কী লেখা হচ্ছে তা আমলে না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে সাংবাদিকরা উল্টাপাল্টা লিখে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন এ শিক্ষাবিদ।
তিনি বলেন, অভিভাবকরা আছেন দুর্ভাবনা নিয়ে, আমাদের কিছু করার নেই। এসব অভিভাবক নিয়ে আমরা কী করবো জানি না। তাদের বলবো বিশ্বাস করেন, একবার একটু বিশ্বাস করে দেখেন যে এই ছেলেমেয়েরা কিছু শেখে কি না?
বুধবার (২৯ মার্চ) জাতীয় শিক্ষাক্রম বিস্তরণ-২০২২ ও দেশব্যাপী প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আরও উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা বিভাগের সব সচিব, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, যে কোনো কাজ করলে শুরুতে সাংবাদিকদের কাছ থেকে বাধা আসে। ওনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের জীবন অতিষ্ট করে দেন। আমি এখন পর্যন্ত দেখলাম না কোনো পত্র-পত্রিকা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করলো। আমি অনেক কিছু জানি যেটা সবার সামনে বললে তারা পালিয়ে যাবেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে চিন্তা করি, যেসব মিডিয়া এটার পেছনে এতো কঠিনভাবে লেগেছে, তাদের সামনা সামনি বসে একটি একটি বিষয়ে কথা বলি। দেখি আপনারা কতক্ষণ কথা বলতে পারেন? কাজেই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছেন, গণমাধ্যমে যা লেখা হয় তা নিয়ে দুর্ভাবনা করবেন না।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে তাদের মতো বলতে দেন। কারণ তাদের পত্রিকা বিক্রি করতে হয়। কেউ ভালো কথা শুনতে চায় না, গালি দিয়ে কথা বললে তা শুনতে ভালো লাগে। পত্র-পত্রিকায় কী বলছে তা নিয়ে আপনারা মাথা ঘামাবেন না। আপনারা নিজেরা সত্যিকার অর্থে যেটা করার কথা সেটা করছেন কি না? আপনারা আপনাদের হৃদয়ের কাছে আন্তরিক কি না, নিজেদের ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব নিয়েছেন কি না? গালাগালির মূল দায়িত্বটা আমি নিজে নিচ্ছি। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, সে কারণে আমি বেশি গালি শুনে সহ্য করে যাচ্ছি।
জাফর ইকবাল আরও বলেন, অনেকে পরিবর্তন পচ্ছন্দ করে না, তারা চায় আগের মতো থাকুক। অনেক অভিভাবক বলেন আমার সন্তান পাস করে যাক তারপর নতুন পরিবর্তন আসুক। এটা অধিকাংশরাই চায়। আমি অনেক দিন ধরে নতুন কারিকুলামের সঙ্গে জড়িত রয়েছি। সবাই খুব যত্নসহকারে কাজ করছে। শুরুতে ৬০টি স্কুলে প্রথমবার পাইলটিং করা হয়েছে। আমি নিজেও কয়েকটি স্কুলে গিয়েছি। বাচ্চারা এটিকে খুবই পচ্ছন্দ করেছে। বাচ্চারা এখান থেকে অবশ্যই শিখেছে।
তিনি বলেন, আমি নিজে কখনো বাচ্চাদের কিছু শেখাইনি, শুধু শেখার আগ্রহ তৈরি করে দিয়েছি। বাচ্চারা নিজেরাই শিখবে, আমি তাদের কীভাবে শেখাবো যদি তারা শিখতে না চায়? জোর করে শেখানো যায় না। নতুন শিক্ষাক্রমে নিজে শেখার সব কিছু তুলে ধরা হয়েছে।
এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক ছেলেমেয়েকে আমি চিনি, যারা ভালো ফলাফল পেয়ে বিদেশের সেবা (বিদেশে অবস্থান) করছে।
এর আগে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার যে অভিযোগ ওঠে, তা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান দায় স্বীকার করে বিবৃতিও দেন গণমাধ্যমে।