আপনি একজন শিল্পী, আপনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কেন- মানবপাচার মামলার আসামি সঙ্গীতশিল্পী ইভা আরমানকে উদ্দেশ করে এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) গুলশান-২ এলাকায় সঙ্গীতশিল্পীর নিজ বাসা ইভা রোজ ভবনের পঞ্চম তলায় ‘অ্যারোমা থাই স্পা’ সেন্টারের নামে পতিতা ও অসামাজিক কাজ পরিচালনার অভিযোগে মানবপাচার আইনে করা মামলার জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট এমন প্রশ্ন তোলেন।
এর আগে ওই মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন সঙ্গীতশিল্পী ইভা আরমান ওরফে শেখ উর্মি আরমান। পরিচয় লুকাতে নেকাবে আবৃত হয়ে আদালতে হাজির হয়েছিলেন তিনি। এ সময় সালোয়ার কামিজ পড়া ইভা নেকাব ও মাস্ক দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে রাখেন তিনি। কিন্তু তার পরও সংবাদকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি ইভা আরমান।
মঙ্গলবার ইভার ছয় সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। জামিন আবেদন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এ দিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আপন চক্রবর্তী ও শুভজিৎ ব্যানার্জী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে মিজানুর রহমান জানান, রাজধানীর গুলশান থানায় মানবপাচারের অভিযোগে করা মামলায় সঙ্গীতশিল্পী ইভাকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তাকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে (ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে) আত্মসমর্পণ করতে হবে।
আপনি একজন শিল্পী, আপনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কেন- এই মন্তব্যের বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আপনারা (শিল্পীরা) হলেন সমাজের দর্পণ, আপনাদের দেখে মানুষ শিখবে। সেলিব্রেটিদের বিষয়ে আদালত এসব কথা বলতেই পারেন।
গত ২৫ জুন গুলশান থানায় ইভা আরমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গুলশান থানায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন খান মামলাটি করেন।
গত ২৪ জুন বিকেল ৬টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর ৪৪ নং সড়কের ইভা রোজ ভবনের ৫ম তলায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ দেহব্যবসা পরিচালনা, যৌন শোষণ ও নিপীড়নমূলক কাজের অভিযোগে সাতজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর ১২/১৩ ধারায় মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গুলশানের ইভা রোজ ভবনের ৫ম তলায় (বাসা নং-৬/বি) ‘অ্যারোমা থাই অ্যান্ড স্পা’ নামের প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উঠতি বয়সের যুবতী ও নারীদের একত্রিত করে অবৈধ দেহব্যবসা পরিচালনা করে যৌন শোষণ ও নিপীড়নমূলক কার্য পরিচালনা করে আসছিল।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন কাজের সুযোগ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই স্পা সেন্টারে রেখে খদ্দের সংগ্রহ করে অর্থের বিনিময়ে পতিতাবৃত্তি ও অসামাজিক কাজে তরুণীদের বাধ্য করতো। তারা সংঘবদ্ধভাবে স্পার আড়ালে পতিতালয় স্থাপন, পরিচালনা ও পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর ১২/১৩ ধারায় অপরাধ করেছেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন রফিকুল হায়দার মোহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা (৪০), অসীম কুমার পাল (৪৪), ইয়াসমিন আক্তার নিঝুম (১৮), শ্রাবণী আক্তার মুক্তা (২৪), রুনা মুড়ং (২৭), রোকেয়া আক্তার মুন (২৭), লামিয়া আক্তার (২৪), হাসিনা মমতাজ (৫৬), স্বরজিৎ (৪০) ও ইভা আরমান।
এদের মধ্যে অ্যারোমা থাই অ্যান্ড স্পার মালিক হাসিনা মমতাজ ও ম্যানেজার স্বরজিৎ পলাতক। বাড়ির মালিক হিসেবে ইভা আরমান এই মামলার ১০ নম্বর আসামি, যিনি আজ ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেলেন।