সব অপারেটরের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে মোবাইল ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা, যা ২০২২ সালের ১ মার্চ থেকে সব অপারেটর মেনে চলবে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, যেকোনো অপারেটর এককালীন সর্বোচ্চ ৮৫টি প্যাকেজ চালু রাখতে পারবে। মঙ্গলবার (০৯ নভেম্বর) বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে এই সেবার উদ্বোধন করা হয়। এতে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান। শুরুতে ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা উপস্থাপনা করেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়- দেশের সব মোবাইল অপারেটরের তিন ধরনের প্যাকেজ থাকবে। সেগুলো হলো- নিয়মিত (Regular) প্যাকেজ, গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ (CCSP) প্যাকেজ এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) প্যাকেজ। একটি অপারেটরের নিয়মিত এবং গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ মিলিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে ৮৫টি। তবে নিয়মিত অথবা গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ সংখ্যা এককভাবে ৫০টির অধিক হতে পারবে না। মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০টি প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারবে। প্যাকেজের ভিন্নতা নির্ধারণে দুটি প্যাকেজের মধ্যে ন্যূনতম পার্থক্য হবে ১০০ এমবি ডাটা অথবা ১০ মিনিট টকটাইম অথবা উভয়ই। সব প্যাকেজের মেয়াদ ০৩/০৭/১৫/৩০ দিন হিসেবে করতে হবে।
যেকোনো নিয়মিত প্যাকেজ চালু করার পর বাজারে উক্ত প্যাকেজের ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল হবে এক মাস। যেকোনো গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ চালু করার পর উক্ত প্যাকেজের ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল হবে সাত দিন। এক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগণ উক্ত গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ বাতিল করার ১৫ দিন পর বাতিলকৃত প্যাকেজের স্থলে নতুন গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ চালু করতে পারবেন। মোবাইল অপারেটর হতে যেকোনো রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ চালু করার পর উক্ত প্যাকেজের ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল হবে সাত দিন। তবে মাসে দুইবার অর্থাৎ ১৫ দিন পর পর এই ধরনের প্যাকেজগুলো চালু করার সুযোগ থাকবে।
এছাড়া, একজন গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজের মেয়াদান্তে অব্যবহৃত ডাটা Carry Forward (অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যোগ হওয়া) হবে যদি গ্রাহক উক্ত প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবার আগেই একই ডাটা প্যাকেজ (ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদসহ) ক্রয় করেন। কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত Regular এবং CCSP প্যাকেজ সমূহ গ্রাহকরা মোবাইল অপারেটরের নির্দিস্ট অ্যাপস/ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম/ অপারেটর অনুমোদিত চ্যানেল ব্যবহার করে ক্রয় করলে অপারেটরগণ প্যাকেজের ওপর বোনাস (টেলিকম সার্ভিস ডাটা, টক টাইম, এসএমএস) প্রদান করতে পারবে। তবে বোনাসসহ প্যাকেজের মূল্যমান প্যাকেজ তৈরির খরচ (Cost of the product) থেকে Negative হতে পারবে না।
গ্রাহক সুবিধার্থে মোবাইল অপারেটরকর্তৃক প্রদানকৃত সব নিয়মিত (Regular) প্যাকেজের তালিকা (প্যাকেজের ID ও মূল্য) সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি গ্রাহককে অপারেটর কর্তৃক মাসিক রিচার্জ এবং ব্যয়ের তথ্য বিবরণী এসএমএস (বাংলায়) ও মোবাইল অপারেটরদের বিলিং পোর্টালে এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। অপারেটর চাইলে বিনামূল্যে অথবা Floor Price (যখন উল্লেখ করা হবে) এ ডাটা প্রদান করতে পারবে এবং অপারেটর কর্তৃক একজন গ্রাহককে প্রতিদিন তিনটির বেশি প্যাকেজ সংক্রান্ত প্রমোশনাল এসএমএস প্রদান করা যাবে না।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে বিটিআরসি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে জানিয়ে সমাপনী বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার গত ১০ মাসে বিটিআরসির নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন। এ সময় তিনি অপারেটরদের ভ্যাট আদায় এবং টিভাস এর মাধ্যমে গ্রাহকের অর্থ কেটে নেওয়া সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, ফোরজি তরঙ্গ নিলাম, সারাদেশে ব্রডব্যান্ডের এক দেশ এক রেট সেবা চালু, মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনে এনইআইআর বাস্তবায়ন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ফেসবুক ও ইউটিউবের নিবন্ধন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিংয়ে সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠনসহ নানা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন।