এবার মন্দ ঋণ ও খেলাপির অপতৎপরতা ঠেকাতে ‘তৃতীয় পক্ষের’ দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে ব্যাংক। ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা যাছাইয়ে প্রাইভেট ক্রেডিট ব্যুরো (পিসিবি) নামে নতুন সংস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী এই সংস্থাটি গ্রাহকের সম্পদ ও যোগ্যতা নির্ধারণ করে রেটিং দেবে। ওই রেটিংয়ের ভিত্তিতেই গ্রাহক ঋণ পাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে সংস্থার ওপরই দায়িত্ব দেওয়া হবে তারাও যদি অসততার পরিচয় দেন তবে এটি বুমেরাং হবে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার মধ্যে একটি এজেন্ডা ছিল ক্রেডিট ব্যুরো (পিসিবি) ও ডিজিটাল ব্যাংকিং। ডিজিটাল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করতে নগদকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে অপেক্ষমাণ আরেক ডিজিটাল ব্যাংক প্রাথমিক শর্ত পূরণ না করতে পারায় আরও সময় পেয়েছে কড়ি। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিবকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যোগ্যতা নির্ধারণের প্রাইভেট ক্রেডিট ব্যুরো (পিসিবি) নামে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সম্পদ ও দায় পরিশোধের হারের ওপর ভিত্তি করে গ্রাহককে রেটিং দেবে। এই রেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে নতুন করে মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ব্যাংকগুলো এখনো ঋণ বিতরণের আগে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমেই গ্রাহক সম্পর্কে তদন্ত ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মডেল অনুসরণ করে একটি নীতি তৈরি করা হবে। এর ভিত্তিতে ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য আইডিয়া ও প্রস্তাবনা আহ্বান করা হবে। পর্যালোচনা শেষে এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু কোম্পানি এ ধরনের কাজ করে থাকে। আর কিছু কিছু ব্যাংকও প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের আগে গ্রাহকের জামানতসহ বিভিন্ন বিষয় দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এ ধরনের কোম্পানির অনুমোদন দেয় তাহলে ঋণ খারাপ হলে তাদের ওপরও দায় বর্তাবে। এটা ভালো। এখন যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অডিট কোম্পানিগুলোর ওপর দায় বর্তায়, ঠিক একইভাবে তাদের ওপরও বর্তাবে।’
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, গত বছরের অক্টোবরে নগদ ও কড়িকে ডিজিটাল ব্যাংকের উইন্ডো খুলে প্রাথমিক কাজ সম্পাদনের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর নগদ তাদের প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকল না নগদের। একই দিনে প্রাথমিক কাজ শেষ করতে না পারায় কড়িকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর এ মিশুক ঢাকা মেইলকে বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর জন্য নগদের আর এক ধাপ বাকি। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আমাদের চূড়ান্ত অনুমোদনে দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে নগদ।