অবশেষে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। শুক্রবার (২৮ জুলাই) পরিবর্তিত তারিখে রাজধানীর নয়াপল্টনে এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিগত সময়ে হওয়া সব মহাসমাবেশের উপস্থিতির রেকর্ড ভাঙতে চায় দলটি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টার পর থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নয়টি ট্রাক দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী মঞ্চ। উত্তরমুখী এই মঞ্চে শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার জন্য থাকবে বসার চেয়ার।
এদিকে, নেতাকর্মীদের বিপুল সংখ্যক উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রায় দেড় শতাধিক মাইক ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাতভর এসব মাইক টাঙানো হবে ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায়।
বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা- দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে মহাসমাবেশে যেমন উপস্থিতি হতো, এবার তার চেয়েও বেশি নেতাকর্মী অংশ নেবেন।দলটির দফতর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে এমন কথাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সে সীমানা বেঁধে দিয়েছে পুলিশ। এটা আসলে আমাদের জেলা পর্যায়ের কর্মসূচির জন্য যথেষ্ট। মহাসমাবেশের জন্য কোনো সীমানা বেঁধে দেওয়ার সুযোগ নেই।’
কেমন নেতাকর্মীর উপস্থিতির আশা করছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদিকে মতিঝিল, পল্টন মোড়, কাকরাইল মোড়ের মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা থাকবে না। অনেক কৌশল করলেও সরকার মাঠের কর্মীদের ঠেকাতে পারেনি।’
এদিকে, অন্যান্য সমাবেশের মতো এবারও নেতাকর্মীদের জন্য রঙ্গিন ক্যাপ তৈরি করেছে কৃষক দল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের কাছে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘২০ হাজার ক্যাপ তৈরি করেছিলাম। এখন বলা হয়েছে আরও এমন পরিমাণ ক্যাপ লাগবে। শর্ট সময়ের মধ্যে তো ক্যাপ বানানো সম্ভব না। এটা দিয়ে বুঝে নেন মহাসমাবেশে কেমন উপস্থিতি হবে।’
অন্যদিকে, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই মহাসমাবেশে অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন।শুক্রবার বেলা ২টায় শুরু হবে সমাবেশের কার্যক্রম। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলোও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এ দিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ করবে।
গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো যুগপৎভাবে এক দফার ঘোষণা দেয়। এই এক দফার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান।
এক দফা দাবিতে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই সারাদেশে মহানগর ও জেলায় পদযাত্রার পর ঢাকায় এই মহাসমাবেশ করার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সেজন্য নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দিয়ে গোলাপবাগে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে বিএনপি ও সমমনা জোটগুলো মহাসমাবেশের তারিখ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার করার ঘোষণা দেয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপিকে ২৩ শর্তে নয়াপল্টনের সামনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।ফলে অনুমতির পর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। যেখানে মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরাও ছিলেন।
পরে মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মহাসমাবেশকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। দলের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহকারে শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশে দলে দলে যোগ দেবেন।’
মির্জা আব্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হয়- অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে প্রত্যাশিত নেতাকর্মী উপস্থিত হতে পারবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কয়েক ঘণ্টার ভেতরে কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম করার ক্ষমতা রাখে।’
নয় ট্রাকে হচ্ছে সমাবেশ মঞ্চ
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হককে মঞ্চ প্রস্তুতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে বর্তমানে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সমাবেশস্থল ঘুরে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে ৯টি বড় ট্রাক। এছাড়াও অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আরও দুটি ট্রাক রাখা হয়েছে। ট্রাকের দুই পাশের ঢাকনা খুলে একটির সঙ্গে আরেকটি একত্রিত করে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ।এদিকে, একে একে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাইকগুলো লাগানোও শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই কাজে নিয়োজিত একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রায় দেড়শ’র মতো মাইক টাঙানো হবে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা। পরে বিকেলে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে নয়াপল্টন ত্যাগ করেন তারা। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
সরজমিনে দেখা যায়, ফকিরাপুল ও কাকরাইল দিয়ে ঢুকছে মিছিল। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়মুখী হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। ফলে ক্ষণে ক্ষণেই মিছিলে মুখরিত হয়ে পড়ছে পুরো নয়াপল্টন এলাকা।নেতাকর্মীরা বলছেন- নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই লোকজন সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করবেন। ফলে দুইটার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হবে পুরো নয়াপল্টন।
এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আশা করি শুক্রবার ঢাকাবাসী জনসমুদ্র দেখবে। আমাদের প্রস্তুতি পূর্ণ।’