ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপ (৮ ও ২১ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরো দুই ধাপ (২৯ মে ও ৫ জুন) বাকী রয়েছে। প্রথম দুই ধাপে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৪০ শতাংশের কম। তার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে ভাবাচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী ও এমপিদের গ্রুপিংয়ের সৃষ্ট ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের কারণে ভোটারদের মধ্যে অনীহা কাজ করছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দল থেকে কোনো বাধা না থাকায় একাধিক প্রার্থী হচ্ছেন। আমরা জানতে পারছি, প্রভাব বিস্তারের নিষেধ থাকলেও অনেকে প্রভাব বিস্তার করছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, প্রার্থীরা ঠিকমতো জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আকৃষ্ট করতে পারছে না। অনেক জায়গায় নানা রকম ঘটনা ঘটতেছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে। এসব কারণে কোনো কোনো উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি খুব কম। তবে ৩০ শতাংশ ভোটারের হার, এটা কিন্তু খুব কম না।’
জানা গেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ গত ৮ মে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভোটের হার ছিল ৩৬.১ শতাংশ। এর মধ্যে ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ, আর ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। আর গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার ৩৭.৫৭ শতাংশ। ৫০ শতাংশ কিংবা এর বেশি ভোট পড়েছে মাত্র ১৯টি উপজেলায়। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসির নানা উদ্যোগের পরও এই ধাপে ভোটের হার তেমন বাড়ানো যায়নি। প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে ১ শতাংশের মতো ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভোটাররা কেন আসেনি একথা যারা বলে, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ৭ জানুয়ারি ভোটার উপস্থিতি ৪২ শতাংশের বেশি। বিএনপি নেতাদের বলব, আপনাদের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বিবিসি মন্তব্য করেছিল ৫ শতাংশ, তখন সরকারিভাবে নির্বাচন কমিশন বলেছিল ২১ শতাংশ। তাহলে আপনাদের জাতীয় নির্বাচনে উপস্থিতি ২১ এর তুলনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ প্লাস কম কিসে?’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি ও তাদের সমমনাদের অবিরাম মিথ্যাচার, এক ধরনের বুদ্ধিজীবীদের অপপ্রচার আছে। টিআইবির (ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) অপপ্রচার আছে। আরো কিছু নামিদামি বুদ্ধিজীবী আছে তারা মানুষের আগ্রহ নষ্ট করতে নির্বাচন সম্পর্কে অপপ্রচার মিথ্যাচার করেছেন। উপস্থিতি খুব ভালো হয়েছে বলবো না, মোটামুটি সন্তোষজনক।’
২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি। আর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তবে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাসের মাথায় সারা দেশে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে প্রথম দুই ধাপে সংসদ নির্বাচনের চেয়েও ভোটের হার কমেছে। সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, এটা দেশবাসী চায়। জনগণের মতামত, জনগণ যাকে খুশি তাকেই ভোট দিচ্ছে। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। চলমান উপজেলা নির্বাচনেও সেই ধারাটা অব্যাহত আছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। সব ভোটারদের নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ভোট প্রয়োগ করতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগের যে দায়িত্বশীলতা, সেই দায়িত্বশীলতার জায়গাটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে।’
‘জাতীয় নির্বাচনের তুলনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীর পারিবারিক, সামাজিক এবং এলাকার বেশ কিছু কারণ থাকে ভোটার উপস্থিত বেশি থাকে কিন্তু এবার কমছে’- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সেই হিসেবে কিছুটা কম মনে হচ্ছে। আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন আছে, সেটি দেখে সার্বিক বিবেচনা বিশ্লেষণ করা যাবে।’
ভোটারদের অনীহা দূর করতে দলের কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে ভোটারদের উৎসাহিত করতে হবে। যাতে সবাই নিজেদের মতামত, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসে। যে কোনো কারণে হোক, কোথাও কোথাও এটাকে বিকৃত করা হয়েছে, এটাকে ঠিক করে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে।’