টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত, হুমকি এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজ মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (১৪ নভেম্বর) উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. তাহরীম হোসেন সীমান্ত এবং দপ্তর সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম জহির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ৮ নভেম্বর সিরাজ মিয়াকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সিরাজকে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ১৭ অক্টোবর ছিল টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের নির্বাচন। মির্জাপুর নির্বাচনী এলাকা-১০ এর জন্য সদস্য প্রার্থী ছিলেন পাঁচ জন। এদের মধ্যে তাহেরুল ইসলাম তাহের এবং সিরাজ মিয়া ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থক।
সিরাজ মিয়া অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পৌরসভা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে ভোট কেনাবেচা করে আমাকে পরাজিত করে তার পছন্দের প্রার্থী তাহেরুল ইসলাম তাহেরকে বিজয়ী করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
গত ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে ২৮ অক্টোবর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের মিলনায়তনে বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই বর্ধিত সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু উপস্থিত হলে পরাজিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজ মিয়া তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। মন্টুকে লাঞ্চিত করার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। সিরাজকে দল থেকে বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি ওঠে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করিনি এবং ভোট কেনাবেচার সঙ্গেও জড়িত ছিলাম না। সিরাজ জেলা পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করলেও তার এলাকায় কোনো জনপ্রিয়তা নেই। সে একজন প্রতারক ও বাটপার হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ভোটারগণ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। সিরাজ আওয়ামী লীগের নেতা হলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে দুই জন এমপির উপস্থিতিতে শারীরিকভাবে আমাকে লাঞ্চিত করে হুমকি দিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। গত ৪ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় সদস্যদের সিদ্ধান্তে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত সিরাজ মিয়া বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয়েছে। আমি তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করিনি। আমার ওপর মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ সংগঠন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের দল। সেই দলের নেতা হয়ে সিরাজ মিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর মতো একজন নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছে। এর আগে সে আমাকে অপমান ও অপদস্ত করেছে। সে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। গত ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিরাজকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেজুলেশন নেওয়া হয়েছে। তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য জেলা কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন কমিটি থেকে আওয়ামী লীগের ১২ নেতা বহিষ্কার: অপরদিকে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন, মহেড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া, আনাইতারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ইঞ্চিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম, আবু হেনা মুস্তফা কামাল ময়নাল হক, ওয়ার্শি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল্লাহে বাকী, বহুরিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতা রেজাউল করিম বাবুল, আজগানা ইউনিয়নের সাবক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক সিকদার, বাঁশতৈল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা মো. লাল মিয়া ও হেলাল দেওয়ান, তরফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ, ইজ্জত আলী জনি এবং ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মো. হুমায়ুন তালুকদার।