গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এদেশের শ্রমিকরা উৎপাদন করে যাচ্ছেন, কৃষি ও শিল্প চলছে, উৎপাদন বাড়ছে। এই শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য পাঁচ বছর পর পর মজুরি বোর্ড গঠন করে মজুরি বাড়ানো হয়। কিন্তু দেশে এখন একটি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন। এ রকম জরুরি সময়েও শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের ফুটো বেলুনের উন্নয়ন দেশের বেশিরভাগ মানুষের উন্নতি করতে পারবে না।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এ সমাবেশ শুরু হয়।
কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন রানা প্লাজার নিহত শ্রমিক আখি আক্তারের মা পোশাক শ্রমিক নাসিমা বেগম। কেন্দ্রীয় সভা প্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআইজিডির গবেষক মাহিন সুলতান, টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আয়ুব খান বা এরশাদের মতো বড় বড় কাঠামো তৈরি করে যে উন্নয়নের মডেল দেখাচ্ছেন, সাধারণ কৃষক, পোশাক শ্রমিক বা দিন মজুরের জীবনে এই উন্নয়নের কী প্রভাব তৈরি হলো? তাজের জীবনে কী উন্নয়ন হলো? সেটিই আসল বিচারের বিষয়? যারা উন্নয়নের কারিগর, তাদের জীবনকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। সভাসদরা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলছে। এই লুট ও বে-ইনসাফির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সব মানুষকে দাঁড়াতে হবে। শ্রমিকের মজুরি আন্দোলন এবং গণতন্ত্রের আন্দোলন একইসঙ্গে চালাতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গত কয়েক মাসে জিনিসপত্রের দাম ভয়াবহ বেড়েছে। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কমবেশি সবার উপরেই পড়ে। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ শ্রমজীবী। তাদের আয়ের ৮০ ভাগ ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। এই খাদ্যপণ্যের দাম যখন বেড়ে যায়, তখন এরাই সবচেয়ে বিপদে পড়েন।
তিনি বলেন, বর্তমানে শ্রমিকরা মজুরি পান আট হাজার টাকা। মুদ্রাস্ফীতির ফলে শ্রমিকদের কেনার ক্ষমতা কমে গেছে প্রায় ৩০ ভাগ। অর্থাৎ শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি হয়ে গেছে পাঁচ হাজার টাকা। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির দাবি ২৫ হাজার টাকার সঙ্গে আনু মুহাম্মদ একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, শুধু খাবার খরচ ২৫ হাজার। বাঁচার মতো মজুরি আরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানিকারকদের লাভ হচ্ছে। এই লাভের অংশ কিন্তু শ্রমিকরা পাচ্ছেন না। জিডিপি বৃদ্ধির সুফল দেশের শ্রমজীবীরা পাচ্ছেন না। হামিদা হোসেন বলেন, নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখে আমরা জুরাইন কবরস্থানে যাই তাজরীনের অজ্ঞাতনামা শ্রমিকদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে। এপ্রিল মাসে আমরা জুরাইনে যাই রানা প্লাজার শ্রমিকদের স্মরণ করে। অজ্ঞাতনামা শ্রমিকদের লাশ ও কবরের চিহ্ন এখন খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। সরকারের পক্ষ থেকে এই শ্রমিকদের স্মৃতিটুকু খুঁজে পাওয়া মুশকিল।