বিশ্বের উন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ‘অবিশ্বাস্য গতিতে’ বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। ফলে এসব দেশের শ্রমবাজারে শ্রমিক সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।
বুধবার ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩ : মাইগ্র্যান্টস, রেফিউজিস অ্যান্ড সোসাইটিজ’ নামের এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, সামনের দিনগুলোতে উন্নত ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে শ্রমিক সংকট প্রবল হয়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র রূপ নেবে। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একদিকে এসব দেশে বয়স্ক মানুষজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে জন্মহার প্রতি বছরই কমছে, নয়তো স্থিতিশীল আছে।
নিম্নমাঝারি ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো চিত্র আবার বিপরীত। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, অধিকাংশ নিম্ন আয়ের দেশের জনগণের গড় আয়ু উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক কম, অন্যদিকে বার্ষিক জন্মহার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শ্রমবাজারে প্রবেশের উপযোগী নারী ও পুরুষে পূর্ণ। একই সঙ্গে তাদের একটি বড় অংশই বেকার।
ফলে সামনের বছরগুলোতে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।
অবশ্য সম্ভাব্য সেই সংকটের সমাধানও নির্দেশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেই প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৌশলগত অভিবাসনের মাধ্যমে ভারসাম্যহীনতার সমাধান হতে পারে। অর্থাৎ, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সঙ্গে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর একপ্রকার চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, যার মাধ্যমে নিয়মিত উন্নত দেশগুলোতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমশক্তি পাঠাতে পারবে দরিদ্র দেশগুলো।
গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য উন্নত জীবনযাপনের আশায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপের পথে পাড়ি দিচ্ছেন দরিদ্র দেশগুলোর অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। কিন্তু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেই যাত্রায় পথমধেই সলিল সমাধি হয় অনেকের। আর জীবিত অবস্থায় যারা ইউরোপে পৌঁছান— তাদেরকে দিনের পর দিন থাকতে হয় বন্দিশিবিরে।
‘বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশ অভিবাসীদের সম্পর্কে যে নীতি অনুসরণ করছে— তা কেবল অনেকাংশে ব্যর্থই নয় উপরন্তু লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তি, রাজনৈতিক মেরুমরণ এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিরও অন্যতম কারণ। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে উন্নত ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো সমঝোতায় আসা সবচেয়ে কার্যকর সমাধান,’ বলা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।