প্রতিটি ঈদ উৎসবে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন হয়ে ওঠে সরগরম। হলগুলো সেজে ওঠে নতুন ছবির পোস্টারে। লাভের মুখ দেখার আশায় খোলা হয় বন্ধ হলগুলোও। এবারের চিত্রটাও একইরকম। তবে ব্যতিক্রম শুধু মুক্তির মিছিলে থাকা সিনেমার সংখ্যা।
প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির অফিস সহায়ক সৌমেন রায় বাবুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার রোজার ঈদে মুক্তির তারিখ নিয়েছে আট সিনেমা। সেগুলো হলো—লিডার: আমিই বাংলাদেশ, জ্বীন, পাপ, লোকাল, প্রেম প্রীতির বন্ধন, শত্রু, আদম ও কিল হিম। সিনেপ্লেক্স বাদে নিয়মিত ও মৌসুমী হল মিলিয়ে ১২০টির মতো সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে এই সিনেমাগুলো।
এমন নয় যে, ঢালিউডে এত সংখ্যক সিনেমা এক ঈদে মুক্তি পায়নি। তবে তখনকার তুলনায় এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিনেমা হলের সংখ্যা বিবেচনায় এতগুলো সিনেমা মুক্তি পাওয়া আদৌ ভালো কিছু বয়ে আনবে কি না—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস এটাকে অশুভ সংকেত মনে করছেন। তার কথায়, ‘এটি খুবই অশুভ সংকেত। ঈদে এত সংখ্যক সিনেমা মুক্তির খবরে আমি একটি ভরাডুবির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। কেননা, সিনেপ্লেক্স বাদে এবার চালু থাকবে ১০০-১২০টি সিনেমা হল। এর মধ্যে কিছু হল মালিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ঈদে শাকিব খানের পুরোনো ছবি চালাবেন তারা। এতে বাকি যে হলগুলো থাকবে সেখানে যদি নতুন ছবিগুলো প্রতিযোগিতা করতে যায় তাহলে কেউ সফল হতে পারবে না। ফলে ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রযোজকরা পরবর্তী ছবি বানানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, যা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অশুভ সংকেত বলে মনে হচ্ছে আমার।’
চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ের স্মৃতিচারণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে রিলিজ কমিটি ছিল। ঈদে মুক্তির তালিকায় থাকা ছবিগুলো নিয়ে আমরা বসতাম। সেখান থেকে বাছাই করে সবচেয়ে ভালো ছবিগুলো মুক্তির তালিকায় রাখা হত। এ ছাড়া দুই ঈদে দুই ধরণের ছবির প্রাধান্য থাকত। রোজার ঈদে সামাজিক গল্পের ছবির চাহিদা বেশি থাকত। আর কোরবানির ঈদে থাকত মারদাঙ্গা সিনেমার চাহিদা। কিন্তু এখন কে শোনে কার কথা! তা ছাড়া রিলিজ কমিটিও নেই। এবার তো গণহারে মুক্তি পাচ্ছে।’
এমতাবস্থায় ছবিগুলো ব্যবসাসফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু—জানতে চাইলে সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘ছবিগুলো থেকে কোনো একটি ছবি বেরিয়ে আসতে পারে অর্থাৎ ব্যবসাসফল হতে পারে। তবে সেটা কোনটা তা বলা যাচ্ছে না! কেননা, অনেক সময় দেখা গেছে ভালো বাজেট ও মানসম্মত ছবিও ফ্লপ গেছে। আবার অনেক সময় মোটামুটি মানের ছবিও জনপ্রিয় হয়েছে। এ ছাড়া এবার শাকিবের নতুন ছবি আসছে। তার নিজস্ব ভক্তগোষ্ঠী আছে। শাকিবের ছবি দেখতেও একটা ঢল নামবে। তবে কোনো ছবি ছবি ব্যবসার মুখ দেখবে তা বলা মুশকিল।’
সুদীপ্ত কুমারের সঙ্গে একমত পোষণ করেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে ছবি মুক্তির কথা ছিল ১২টা। সেখান থেকে চারটি ছিটকে গেছে। ফলে মুক্তি পাচ্ছে আটটি ছবি। কিন্তু এই ছবিগুলো অল্পসংখ্যক হলে কীভাবে কী করবে আমি তো বুঝতে পারছি না!’
এত ছবির ভিড়ে সামগ্রিকভাবে ভরাডুবিরই আশংকা করছেন খসরু। তারপরও তারকাদের জনপ্রিয়তা ও ভালো বাজেটের ছবি কিছুটা আশা জাগাচ্ছে তার মনে। খসরু বলেন, ‘শাকিবের একটি ভক্তশ্রেণি আছে, অনন্ত জলিলেরও কিছু দর্শক আছে। এ ছাড়া মুক্তিপ্রতিক্ষীত জ্বিন ও লোকাল ছবিটি বেশ আলোচনায় আছে। সবমিলিয়ে দেখা যাবে এই ছবিগুলো হয়ত সম্মানজনক স্থানে থাকবে। কিন্তু কোনো ছবিই ব্যবসায়ীকভাবে লাভবান হয়তো হতে পারবে না।’
তবে হলসংখ্যা অল্প হলেও একগুচ্ছ ছবি মুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কজী শোয়েব রশীদ। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে এতগুলো ছবি মুক্তিকে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটা অবশ্যই ভালো দিক। আরেকভাবে বলা যায়, এতে আমাদের সারা বছরের খোরাক উঠে যাচ্ছে। এখন ছবিগুলো কোয়ালিটি ভালো থাকলে আশা করি, ভালো কিছুই হবে।’
এমন পরিস্থিতিতে মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমাগুলো কতটা ব্যবসাসফল হয়—সেটাই জানতে অপেক্ষা করতে হবে ঈদের পর পর্যন্ত। যদিও সবগুলো সিনেমা এই প্রতিযোগিতায় সফল হয়, তাহলে চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।