ইসি সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ডামি নির্বাচনকে মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চাপে নামসর্বস্ব দেশীয় ৯৬টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব নির্বাচন পর্যবেক্ষ সংস্থার নিবন্ধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ইসি। এ কমিটি যাচাই-বাছাই করবে। এতে বাতিল হতে পারে বিগত সরকারের নিবন্ধন দেওয়া বেশ কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের সমস্ত ক্রাইটেরিয়া পুনর্মূল্যায়ন করব। এরপর আমরা যদি মনে করি এগুলো রাখার দরকার আছে, তাহলে রাখব। আর যদি মনে করি একটু পরিমার্জন বা পরিবর্তন করা দরকার, আমরা সেটা করব। তারপরে যারা যারা আমাদের ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে পড়বে তাদের আমরা পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে রাখব। ভুল তথ্য ও অপপ্রচার থেকে কমিশন সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকবে বলেও তিনি জানান।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য কমিশন নতুন করে আবেদন আহ্বান করবে নাকি বিদ্যমান সংস্থাগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন করে রাখবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না ইতঃপূর্বে কী হয়েছে। কিন্তু আমরা তো সবকিছু মুছে ফেলব না, আমরা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যতটুকু ভালো করা যায় তা করব।’
জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় ইসি। ২০২৩ সালে ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় সংস্থাগুলোকে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আহ্বান জানায় সংস্থাটি। এক্ষেত্রে নিবন্ধন পেয়ে সংস্থাগুলো পরবর্তী পাঁচ বছর স্থানীয় নির্বাচনও পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত সংসদ নির্বাচনে দেশীয় বিভিন্ন সংস্থার ২০ হাজার ৭৭৩ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আবেদন করেছিলেন। ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জনকে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দিয়েছিল। পর্যবেক্ষক হতে হলে ন্যূনতম মাধ্যমিক পাস এবং ২৫ বছরের বেশি বয়সী হতে হয়।
এদিকে ইসির পক্ষ থেকে এরইমধ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে বড় প্রস্তুতির মধ্যে আছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন এবং প্রয়োজনীয় কেনাকাটার মতো কাজগুলো শেষ করা। এগুলোর জন্য একটু লম্বা সময় প্রয়োজন হয়। এর বাইরে নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ব্যালট পেপার তৈরির মতো কাজগুলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শুরু হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে, যা শেষ হবে জুনে।