পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারে আত্মঘাতী বোমাহামলার পর দেশটির কেন্দ্রীয় রাজধানী ইসলামাবাদে সতর্কতা জারির পাশাপাশি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ইসলামাবাদ পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে।
এক টুইটবার্তায় জানানো হয়, ইসলামাবাদ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক আকবর নাসের খানের নির্দেশে ইসলামাবাদে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে নজরদারির পাশাপাশি তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। এমনকি, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও ভবনগুলোতে স্নাইপার শ্যুটার মোতায়েন করা হয়েছে। সেফ সিটি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আরও জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা ইসলামাবাদের জনগণকে কম্পিউটারাইজড জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (সিএনআইসি) গুরুত্বপূর্ণ সব কাগজপত্র তাদের সঙ্গে রাখার নির্দশ দিয়েছেন। তাছাড়া চেকপোস্টে তল্লাশি চলাকালে সাধারণ নাগরিকদের কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে, একইভাবে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার মালাকান্দ বিভাগে। বিভাগীয় পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার পেশোয়ারের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমাহামলায় অন্তত ৩২ জন নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত দেড়শো জন। এদিকে, এ হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)।
দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তারা জানান, সোমবার পুলিশের দুটি চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করেন হামলাকারী। মসজিদটিতে জোহরের নামাজ চলাকালে সামনের কাতারে ছিলেন তিনি।
পেশোয়ারের জেলা প্রশাসক শফি উল্লাহ খান নিশ্চিত করেছেন, আত্মঘাতী হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ১৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের জন্য রক্ত সহায়তা চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খাইবার পাখতুনখোয়ার তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আজম খান পেশোয়ারের সব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোকে ত্রাণ তৎপরতা দ্রুত করার নির্দেশও দিয়েছেন।একজন প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকে জানান, তিনি যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। এটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল। বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয় চারপাশ। তিনি আরও জানান, তার জ্ঞান ফিরলে মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়তে দেখেন।সিভিল সেক্রেটারিয়েট অ্যাসোসিয়েশন পেশোয়ারের সভাপতি তাসাভুর ইকবাল বলেন, আমি নিয়মিত ওই মসজিদে নামাজ পড়ি পুলিশ লাইন্স এলাকার নিরাপত্তা সবসময়ই কড়া থাকে। এমনকি পরিচয় দেওয়া ও দেহ তল্লাশি ছাড়া কেউই ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না।
ইকবাল আরও বলেন, ‘আজ যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটি একটি বড় মসজিদ, যেখানে একই সময়ে চারশ-পাঁচশ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। বিস্ফোরণের পর ভবনটি ধসে পড়ে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি মসজিদের ভেতরে আত্মঘাতী বোমা হামলা প্রমাণ করে, ইসলামের সঙ্গে হামলার সঙ্গে জড়িতদের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, টুইটারে এ হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও।