ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গাজায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল ‘হয়তো’ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। শনিবার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধের সময় কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এটি ‘মূল্যায়ন করা যুক্তিসঙ্গত’ যে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো ব্যবহারের বিষয়ে ইসরায়েলের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেগুলো ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ উপায়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, মার্কিন সরকারের কাছে তার এই মূল্যায়নে ‘সম্পূর্ণ তথ্য’ নেই।
বিবিসি বলছে, বেশ বিলম্বের পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়। হোয়াইট হাউসের নির্দেশিত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশটি কীভাবে গত বছর সংঘর্ষের শুরু থেকে মার্কিন সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
যদিও এই প্রতিবেদনটিতে গাজায় কিছু ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবেই তিরস্কার করা হয়েছে, তারপরও ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে প্রতিবেদনে নিশ্চিতভাবে বলা হয়নি।
ইসরায়েলকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ‘অসাধারণ সামরিক চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করতে হয়েছিল বলেও এতে বলা হয়েছে। এমনকি এতে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন অস্ত্রের আইনি ব্যবহার মেনে চলার বিষয়ে ইসরায়েলের কাছ থেকে পাওয়া আশ্বাস ছিল ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য’ এবং তাই (ইসরায়েলে) অস্ত্রের চালান অব্যাহত রাখা যেতে পারে।
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু হামাস ‘সামরিক উদ্দেশ্যে বেসামরিক অবকাঠামো এবং বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে’, তাই সক্রিয় যুদ্ধের মধ্যে বৈধ লক্ষ্যবস্তুগুলো ঠিক কী তা নির্ধারণ করা প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে ‘অসঙ্গত, অকার্যকর এবং অপর্যাপ্ত’ বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ এবং মানবিক সংস্থাগুলো।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট দেখতে পেয়েছে, সংঘাতের প্রথম মাসগুলোতে গাজায় মানবিক সহায়তা ‘বাড়ানোর’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার সাথে পুরোপুরি সহযোগিতা করেনি ইসরায়েল। তবে এতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি সরকার গাজায় মার্কিন মানবিক সহায়তা পরিবহন বা বিতরণ নিষিদ্ধ বা অন্য কোনোভাবে সীমাবদ্ধ করছে বলে আমরা এখন মূল্যায়ন করছি না।’
বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যার কয়েকদিন আগেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, রাফায় হামলা করলে ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার যে হুমকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে নেতানিয়াহু বলেন, ‘যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, আমরা আমাদের নখ দিয়ে লড়াই করব। কিন্তু আমাদের নখের চেয়ে অনেক বেশি আছে।’
এমনকি প্রয়োজনে ইসরায়েল ‘একাই লড়াই করবে’ বলেও উচ্চারণ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার লোক নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।