ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান এবং কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম রাইসি বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুক্রবার নিজের ভোট প্রদানের পর জনগণকে ভোট দিতে উৎসাহিত করলেও, খুব বেশি ভোট পড়েনি। শনিবার (১৯ জুন) প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, খামেনি মদদপুষ্ট রাইসি ১৭.৭ মিলিয়ন ভোট পেয়েছেন, যেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫৯ মিলিয়নেরও বেশি।
তবে, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নিয়ন্ত্রিত একটি প্যানেল রাইসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পরেই তার এই নিরঙ্কুশ জয় সম্ভব হয়। তবে সরকারের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ইরানিরা ভোট না দেয়ার মাধ্যমে তাদের সহমর্মীতা ও সমর্থন প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এই নির্বচান বয়কটের ডাক দেন।
এদিকে, সরকারি ভাবে ফলাফল ঘোষণা না হলেও, রাইসির প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে শুভেচ্ছা জানানো শুরু করেছেন। উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামাল অর্ফ জানিয়েছেন, ২ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ শুক্রবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। প্রেস টিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন রাইসি। তাকে ভোট দিয়েছেন ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ।
ইরানের যেকোনো নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা ধরে দেশের জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন রক্ষণশীল প্রার্থী মোহসেন রেজায়ি। তিনি পেয়েছেন ৩৩ লাখ ভোট।
অপরদিকে, সংস্কারপন্থী জোটের প্রার্থী নাসের হেম্মাতি পেয়েছেন ২৪ লাখ ভোট। নির্বাচনের অপর প্রার্থী আমির হোসেন কাজিজাদে হাশেমি পেয়েছেন প্রায় ১০ লাখ ভোট। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ইরানে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলে শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত। ভোটের পর থেকেই কট্টরপন্থী নেতা ইব্রাহিম রাইসির জয় অনেকটাই সুনিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছিল। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। নাম উল্লেখ না করেই তিনি ‘জননির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন পেয়েছিলেন ৭ জন। ৩ জন সরে দাঁড়ানোয় এখন প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। পরবর্তীতে অপর এক প্রার্থীর নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে, তিনজন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে রাইসির অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আব্দুল নাসে হেম্মতি। এক চিঠিতে তিনি সরাসরি রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, আশা করি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অধীনে আপনার প্রশাসন ইরানকে গর্বিত করবে, জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে এবং জাতির মঙ্গল ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় রাজধানী তেহরানের একটি কেন্দ্রে নিজের ভোট প্রদান শেষে দেশবাসীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেকটি ভোট গণনা করা হবে। আসুন, ভোট দিন এবং আপনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করুন। এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
কিন্তু ইরানে ৫৯ মিলিয়নেরও বেশি ভোটার থাকলেও এই নির্বাচনের তেমন ভোটার অংশগ্রহণ করেনি। বিচারপতি রাইসিকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরাও। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত ইব্রাহিম রাইসি ২০১৯ সাল থেকে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ভোটের ফলাফল মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর রাইসি বলেন, নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করায় ভোটারদের স্বাগত জানাচ্ছি।