ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ এখনও চলছে। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৪৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এবার সেই প্রতিবাদের সুরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, জার্মানির বার্লিন এবং জাপানের টোকিওতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। শনিবার (২৩ অক্টোবর) এসব বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।
জার্মানির পুলিশ বলছে, ইরানের নারীদের বিক্ষোভের সমর্থনে বার্লিনের রাস্তায় নামেন প্রায় আশি হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই ইরানি বংশোদ্ভূত। এ ছাড়া অন্যরাও অংশ নিয়েছেন এতে।
জার্মানির রাজধানীতে শনিবারের এই বিক্ষোভ সমাবেশ ইরানি প্রবাসীদের অনুষ্ঠিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভের সময় নারী, জীবন, স্বাধীনতা ও ইরানের জন্য ন্যায়বিচার নিয়ে স্লোগান দেন অংশগ্রহণকারীরা।
ইরানে জনসম্মুখে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দা পালনের নিয়ম রয়েছে। এই বিধিগুলো তদারক করার জন্য রয়েছে দেশটির ‘নৈতিকতাবিষয়ক’ পুলিশ। নৈতিকতাবিষয়ক পুলিশের একটি দল সম্প্রতি মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে আটক করে। আমিনি তার পরিবারের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে গিয়েছিলেন। আটকের পর মাহসা থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাহসা আমিনির। এ ঘটনার প্রতিবাদে ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইরানে চলছে আন্দোলন।
শনিবার একই প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের রাস্তায় নামেন হাজারো মানুষ। তাদের দাবির মধ্যে ইরানের শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের বিরুদ্ধে আরও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার দাবিও তুলে ধরা হয়। আয়োজকরা বলেন, ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ-মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
ইরানি বংশোদ্ভূত একজন বলেন, ‘এটা শ্বাসরুদ্ধকর, আশ্চর্যজনক পরিস্থিতি, প্রথমবারের মতো এত মানুষ একত্রিত হয়েছে। আমি সত্যিই গর্বিত’।
ইরানের অভ্যন্তরে, কর্তৃপক্ষ অনেক এলাকায় ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ মাহসা আমিনির নির্যাতনে নিহত হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে। তারা বলছে যে, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়।
ইরানের হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির (এইচআরএএনএ) তথ্য বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৩২ শিশুসহ ২৪৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ জনকে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও তরুণ।
২০১৯ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ইরানে। এরপর এবারই এতো বড় বিক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সরকার।