৩০০ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট করতে চাইলেও নতুন ইভিএম কেনার পর কোথায় রাখা হবে সেই জায়গা নেই নির্বাচন কমিশনের। শুধু তাই নয়, নতুন কেনা ইভিএম রাখার জন্য চার্জ ছাড়াও এগুলো দেখভালের জনবলও নেই ইসির।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে ‘নির্বাচনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় এমন কথাই জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।
ইসি আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব, সেই প্রযুক্তিটাকে আমাদের আয়ত্তে নিতে হবে। এছাড়া যে সমস্ত টেকনিক্যাল ইকুইপমেন্ট ব্যবহার হবে, সেটি সংরক্ষণের জন্য সঠিক স্থান লাগবে। ধরে নেন আমরা ইভিএম কিনেছি, ইভিএম কোথায় রাখব জানি না। ইভিএমকে যেভাবে সংরক্ষণে করতে হবে, চার্জ দিতে হবে, তার জনবল আমাদের নেই। এগুলো সবদিক থেকে যেন গ্রহণযোগ্য অবস্থানে থাকে, সেই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। আইটি জনবলে যারা আছে, তাদের প্রোপারলি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’ইভিএমে ভোট নিয়ে অভিযোগ নেই- এমনটা জানিয়ে আহসান হাবিব খান বলেন, বর্তমান কমিশন প্রায় ৫০০টি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। এগুলোর প্রায় সবকটিতে ভোট ইভিএমে নেওয়া হয়েছে। ইভিএমে জাল ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএম ব্যবহারে কোনো স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি, কেউ মৃত্যুবরণ করেনি এবং ব্যালট লুট হয়নি। ইভিএমের তথ্য কখনো হারিয়ে যাবে না।
সবশেষ বুধবার (৪ জানুয়ারি) গাইবান্ধা-৫ আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর এই আসনে নির্বাচনে অনিয়মের কারণে পুরো ভোট বন্ধ করে দেওয়া হলেও বুধবারের উপনির্বাচনে তেমন কোনো সমস্যা পায়নি ইসি। কোনো প্রার্থীও কোনো ধরণের অভিযোগ করেনি।
সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের মাঝে সুশাসনের বড় অভাব আছে। আমার যে দায়িত্ব আছে, সেটা কতটুকু আমি ইনসিওর করছি, এটা কিন্তু বিবেচনার বিষয়। তথ্য-প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটারদের আস্থা অর্জন। আমরা মনে করি আস্থা অর্জনের দিক দিয়ে আমরা অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যমতের প্রয়োজন আছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন একমতে কাজ করতে পারে। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে, সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য, যদি কোনো একটা সমাধান বের করতে পারি, তাহলে কিন্তু সবকিছু সহজ হবে। দেশের শান্তি ফেরত আসবে।
এ সময় প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষকসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন কমিশনার আহসান হাবিব। তিনি বলেন, নির্বাচনের মতো বৃহৎ কর্মযজ্ঞ কেবল একক কোনো সংস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে হবে। এ সময় বর্তমান কমিশন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলেও দাবি করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, নির্বাচনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বজায় রাখা এবং ভোটকেন্দ্রে সব ধরনের অনিয়ম রোধ করতে বিভিন্ন সময় ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সকল দলকে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আগামী নির্বাচনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রমুখ।
কর্মশালায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।