প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। সংলাপে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকলেও তাদের বক্তব্য মুখ্য বিবেচনায় আসেনি।’
বুধবার (২৪ আগস্ট) সকালে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন সিইসি। আগের দিন কমিশন সভায় দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
ইভিএম বিতর্কের মধ্যে আগামী নির্বাচনে কোনো সংকট হবে না বলেও ইঙ্গিত করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আগাম ভবিষ্যত বাণী করা যাবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও সংকটের কথা বলা হয়েছে। এখন দেখা যাক কী হয়।’
ভোট সুষ্ঠুভাবে করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা বিবেচনায় নিয়ে ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমে যাওয়ার একটা বড় সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। ভোট সামলাবে ইসি, রাজনৈতিক দল নয়।ইসির এটা বড় দায়িত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। ভোট যেন আরও স্বচ্ছন্দ, আরও সুষ্ঠু হতে পারে তা নিশ্চিত করবে ইসি। যারা ভোট দিতে আসবেন, সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কে কী বলেছে, সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় আসেনি। কিন্তু বক্তব্যগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। একইসঙ্গে লাখ লাখ কোটি কোটি ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রে আসেন, তারা যেনো আরও ভালোভাবে ভোট দিতে পারেন। তা বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের পাঁচ মাসের বেশি সময় হয়ে গেল। আমরা ইভিএম নিয়ে চট জলদি কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। প্রথম থেকেই বলেছিলাম, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, কতটা নির্ভরযোগ্য পরখ করে দেখার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন দল, টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের ডেকেছি, অনেকের মতামত নিয়েছি। এর ওপর নির্ভর করে, কমিশন সব দলের মতামত বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ১৫০-১৫০ এভাবে ভাগ করে ইভিএম ব্যবহার করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে যে কথাগুলো চালু আছে, বলছেন সেগুলো ভোটের পরেও কিন্তু বোঝা যাবে। ইভিএমে নির্বাচন হলে যদি দেখা যায়, ফলের ধরনটা দেখে বোঝা যাবে আসলে এ যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো কারচুপি করা হয়েছে কী না। আমরা কমিশন কিন্তু পুরোপুরি আস্থাশীল হয়েছি, একেবারে সর্বস্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত ১৫০ আসনে আমরা ইভিএম ব্যবহার করবো।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা একটি দলের চাওয়া বা কারও চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নয়; আমরা বিরোধিতাগুলোকেও বিবেচনায় নিয়েছি। একটি দল ইভিএমের পক্ষে বলেনি, বেশ কয়েকটি দল পক্ষে বলেছে। কিছু কিছু দল শর্ত সাপেক্ষে বলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। আমরা একটা বিভাজন করলাম, সম্ভব হলে ১৫০ আসনে করবো। ১৫০টা পর্যন্ত সম্ভব হবে কী না এখনও বলতে পারছি না। ইভিএম প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে করতে পারবো।’
ইভিএম নিয়ে সোমবার কমিশনের সারসংক্ষেপ পাঠানোর পরদিনই দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পর্যালোচনা করেছেন তারা। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তটাই বুধবার নিয়েছেন। কোনো ধরনের তাগড়াহুড়ো করে নয়।’
ইভিএম বিতর্কে নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নিয়ে কোনো সংকট হবে কী না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘ভবিষ্যতটা আমরা বলতে পারবো না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আগের নির্বাচনগুলো নিয়েও আপনারা সংকটের কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সংকট হবে কী না তা প্রেডিক্ট করার সাধ্য নেই।’
অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়েও আগাম কোনো ‘ভবিষ্যত বাণী’ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইভিএম কী নতুন করে সংকট তৈরি করবে কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওয়েট করেন, দেখি কী হয়। এছাড়া, ভোটে না আসার ঘোষণার মধ্যে বিএনপিকে নিয়ে কোনো আগাম মন্তব্যও করতে চাননি তিনি। সিইসি বলেন, তখন বিবেচনা করা হবে। উনারা যদি আসেন, তখন বসে সিদ্ধান্ত নেবো।’