প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়েই মূলত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের ফল। মাত্র ১২৬ রানে অলআউট হওয়ার পর ইনিংস পরাজয় এড়াতেই করতে হতো আরও ৩৯৫ রান। কিন্তু লিটন দাস ব্যতীত আর কেউই বড় ইনিংস খেলতে না পারায় ইনিংস ব্যবধানে হেরেই শেষ হলো বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর।
প্রথম ম্যাচ জেতায় দুই ম্যাচ সিরিজটি শেষ হলো ১-১ ব্যবধানে। একইসঙ্গে চলতি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে মূল্যবান ১২ পয়েন্ট নিয়েই দেশে ফিরবে মুমিনুল হকের দল। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাসগড়া ম্যাচে জয়ের জন্য পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল বাংলাদেশক। তবে ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে তিন দিনের মধ্যেই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৮ রানে অলআউট হয়ে এক ইনিংস ও ১১৭ রানের ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ।
শৈল্পিক ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস পরাজয় এড়ানোর আশাও বাঁচিয়ে রেখেছিলেন লিটন। কিন্তু অপরপ্রান্তে তার সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি আর কোনো ব্যাটার। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও হতাশ করেছেন টপঅর্ডার ব্যাটাররা।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১২৬ রানে অলআউট হয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের করা ৫২১ রানের চেয়ে ৩৯৫ রানে পিছিয়ে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশকে ফলোঅন করায় স্বাগতিকরা। আজ দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে টপঅর্ডার ব্যাটারদের প্রত্যেকেই ভালো শুরু করেন। কিন্তু তারা কেউই নিজেদের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। সাদমান ইসলাম ২৭, মোহাম্মদ নাইম শেখ ২৪ ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন ২৯ রান করে।
শুরু থেকেই সাবলীল মনে হচ্ছিল প্রথম ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা মুমিনুলকে। আরও একটি ঝকঝকে ইনিংসের আশাই ছিল তার ব্যাট থেকে। কিন্তু নেইল ওয়াগনারের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে প্রথম স্লিপে ধরা পড়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এরপর ইয়াসির আলি রাব্বিও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। নেইল ওয়াগনারের বাউন্সারে সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে ৯ বলে ২ রান করে ফেরেন তিনি। মাত্র ১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পাল্টা আক্রমণের পথেই হাঁটেন লিটন ও সোহান। যার সুবাদে দ্রুত রান উঠতে থাকে স্কোরবোর্ডে।
রীতিমতো ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন লিটন। মাত্র ৬৯ বলে ছয় চার ও এক ছয়ের মারে চলতি সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি পূরণ করেন লিটন। অপরপ্রান্তে সোহানও খেলতে থাকেন সাবলীলভাবে। তৃতীয় সেশনের প্রথম ১০ ওভারে ৭৬ রান যোগ করেন লিটন ও সোহান।
বিশেষ করে ট্রেন্ট বোল্টের করা ৬১তম ওভারের প্রথম তিন বলে হ্যাটট্রিক বাউন্ডারিসহ মোট চারটি চার মারেন লিটন। এর আগে কাইল জেমিসনের ওভারে হাঁকান চার ও ছয়। লিটন ও সোহানের জুটিতে মাত্র ৯৯ বলেই যোগ হয় ১০০ রান। কিন্তু এর পরপরই ড্যারেল মিচেলের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে আউট হন সোহান।
দলীয় ২২৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের ফলে পরাজয় ঘনিয়ে আসে বাংলাদেশ দলের। তবে এর মাঝেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। তিনি ইনিংসের ৭৪তম ওভার শুরু করেছিলেন ব্যক্তিগত ৯০ রানে থেকে। প্রথম তিন বল থেকে নেন ২, ২ ও ৪ রান; পৌঁছে যান ৯৮ রানে।
পরে চতুর্থ বলটি থার্ড ম্যানের দিকে ঠেকে দিয়েই দুই রান নিয়েই শতকের উদযাপন সারেন লিটন। মাইলফলকে পৌঁছতে তিনি খেলেন ১০৬ বল, যেখানে ছিল ১৪ চার ও একটি ছয়ের মার। এর আগে গত নভেম্বরে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১১৪ রান করেছিলেন তিনি।
এবার সেটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়নি লিটনের। জেমিসনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়ার আগে ১০২ রান করেন তিনি। রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলের কারণে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে দারুণ ফর্মে থাকা এই ডানহাতি ব্যাটারকে। এরপর বাকি উইকেট তুলে নিতে আর সমস্যা হয়নি নিউজিল্যান্ডের।
তবে ম্যাচের সবচেয়ে আইকনিক মুহূর্ত ছিল দশম উইকেট পতনের ঘটনা। জেমিসন-ওয়াগনারের তোপে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের পরাজয় যখন নিশ্চিত, তখন শেষ উইকেট নেওয়ার জন্য বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা রস টেলরকে ডাকেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম লাথাম।
ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে উপস্থিত দর্শকদের একদমই হতাশ করেননি এ বিদায়ী ক্রিকেটার। টেলরের ওভারের তৃতীয় বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আকাশে ভাসিয়ে দেন এবাদত হোসেন। সেই বল লাথাম তালুবন্দী করতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ইনিংস ও ১১৭ রানের ব্যবধানে জয়। আর টেলরকে ঘিরে উদযাপনে মাতেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।