ইতালি যাবার স্বপ্নে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে এক বছর তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন নেত্রককোনার কলমাকান্দার ১৩ যুবক।
গত বছরের ২০ মার্চ দালালের মাধ্যমে প্রত্যেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা করে দিয়ে লিবিয়ায় যান ওই যুবকেরা। লিবিয়ায় পৌঁছার পরপরই ভাল বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে দ্বিতীয়বার টাকা আদায় করে দালালরা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মারধর করে সেই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠায় দালালেরা। সেইসাথে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে ২১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই যুবকেরা এখন জীবিত না মৃত সেই খবরও জানেন না পরিবারের লোকজন।
নিখোঁজ যুবকরা হলেন, কলমাকান্দা উপজেলার ফকির-চান্দুয়াইল গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মো. আলমগীর, হাসিম মিয়ার ছেলে সালমান মিয়া, মিরাজ আলীর ছেলে আবুল কাশেম, আব্দুল জলিলের ছেলে শাহীন মিয়া, আওয়াল মিয়ার ছেলে কালাম মিয়া, আব্দুর রশিদের ছেলে রাকিব মিয়া, আবু তাহেরের ছেলে নজরুল ইসলাম, মহর আলীর ছেলে মাসুম মিয়া, খলিল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন,আব্দুল খালেকের ছেলে সোহাগ মিয়া, আব্দুল হামিদের ছেলে ফিরুজ মিয়া, কাছম আলীর ছেলে সেলিম মিয়া ও আশ্রব আলীর ছেলে মান্নান মিয়া।
এ ঘটনায় নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে নেত্রকোনা মানব পাচার ট্্রাইব্যুনালে গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে লিবিয়া প্রবাসী আদম ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন (৫০) ও স্থানীয় দালাল মো, জামাল মিয়া (৩৫) সহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।
নিখোঁজ হওয়া যুবক মো. আলমগীরের মা রহিমা, সালমান মিয়ার বাবা হাসিম মিয়াসহ কয়েকজন অভিবাবক বলেন, এলাকার পাঁচকাটা গ্রামের আদম ব্যবসায়ী লিবিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম হোসেন ও স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী জামাল মিয়ার মাধ্যমে লিবিয়া যান ওই ১৩ যুবক। এজন্য জনপ্রতি সাত লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা করে দালালের হাতে তুলে দেয়। পরে সেখান থেকে ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে আবার প্রতিজনের জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় দালালেরা। দুই-তিনজন টাকা না দেওয়ায় ওই যুবকদের হাত-পা বেঁধে মারধরের ভিডিও পাঠানো হয় স্বজনদের কাছে। এরপর গত বছরের ২১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তখন থেকে তাদের সাথে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমরা আমাদের সন্তানদের ফিরে চাই। সেই সাথে দালালদের বিচার চাই।’
জানতে চাইলে আদম ব্যবসায়ী ও লিবিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার বাড়ি উপজেলার পাঁচকাটা গ্রামে গেলে স্বজনরা জানায়, ইব্রাহিম দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ রাখছে না।
এদিকে স্থানীয় দালাল বাজারের ব্যবসায়ী অভিযুক্ত জামাল মিয়া টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘লিবিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম হোসেন আমার বন্ধু। সে লিবিয়া থেকে যোগাযোগ করে আমার একাউন্টের মাধ্যেমে কয়েকজনের টাকা পাঠাতে বললে আমি তাদের টাকা পাঠিয়েছি। এরবেশি আমি কিছুই জানি না। তবে ওই গ্রামের যুবকরা বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে জেনে খুব খারাপ লাগছে।’
মামলাটির আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মাদ ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ‘গত মঙ্গলবার মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি আদালত আমলে নিয়েছেন। এবিষয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
জেলার কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম (পিপিএম) বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। এঘটনার বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো।