কক্সবাজারের মহেশখালি, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে উৎসবের আবহ নিয়ে শুরু হয় নির্বাচন। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক ভোট গ্রহণ চলার পর শুরু হয় সহিংসতা। এতে গোলাগুলিতে মহেশখালিতে ও কুতুবদিয়া দুজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেলা সোয়া ১০টার দিকে মহেশখালির কুতুবজুম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ কামাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে আবুল কালাম (৩২) নামের একজন নিহত হন। আর বেলা সাড়ে ১২ টায় ব্যালট পেপার ছিনতাই করাকে কেন্দ্র করে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম (৩৫) নিহত হয়েছেন।
সহিংসতার কারণে মহেশখালির কুতুবজুমের ২টি, কুতবদিয়ার বড়ঘোপের ২টি ও টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের ২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিলো। অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিলো। ঘণ্টা দুয়েক পর আবার সেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে।
জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নানা সূত্রে জানা যায়, কুতুবজুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছুরিকাঘাত ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কুতুবজোমের পশ্চিম পাড়া গ্রামের ছোট মিয়ার ছেলে আবুল কালাম নিহত হন। আহত হন ৪ জন। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ কামাল বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকরা কুতুবজুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামিয়ুস সন্নাহ দারুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্র দখল নিতে পরিকল্পিতভাবে গোলাগুলি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে নৌকা প্রার্থীর করা অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন বলেন, প্রায়ই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে শেখ কামালের সন্ত্রাসী বাহিনী। এমন খবর পেয়ে ভোটার ও তার সমর্থকরা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রে গেলে নৌকার প্রার্থীর ক্যাডাররা গুলি করেছে।
এ বিষয়ে কুতু্বজুম ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুর রহমান বলেন, গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। দুই কেন্দ্রই পাশাপাশি। আপাতত দুই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিলো। অপরদিকে, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড়ের পিলটকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলিতে আবদুল হালিম (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছে।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুতুবদিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। তাদের মাঝে আহত ১৮ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শরীফ। নিহত আবদুল হালিম বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং ৭নং ওয়ার্ড় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো.ওমর হায়দার ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা রদ কালে আবদুল হালিম নামে একজন নিহত হয়েছে স্বীকার করপ বলন, নিহতের লাশ কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। নিহত ব্যক্তি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, পুলিশের গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম নিহত হয়েছে। তবে কি কারণে পুলিশ গুলি করেছে তা তিনি জানাতে পারেননি।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরফানুল হক চৌধুরী বেলা ১টার দিকে লম্বাবিল ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেন। তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও এজেন্টদের অভিযোগ শোনেন। তাৎক্ষণিক দুই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শুরু থেকেই সবখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলে। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। তবে বিচ্ছিন্ন দুটি ঘটনায় দুজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৩০-৩৫ জন। এ ছাড়া বাকি নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।