প্রতিবেশী ইউক্রেন থেকে শস্য-সহ অন্যান্য খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি। স্থানীয় কৃষিখাতকে রক্ষা করার জন্য দেশ দু’টি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দুই দেশের সরকার শনিবার (১৫ এপ্রিল) জানিয়েছে।
মূলত সরবরাহ বেশি হওয়ার কারণে ওই অঞ্চলে পণ্যের দাম বেশ কমে গেছে। রোববার (১৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
অবশ্য পোল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করেছে ইউক্রেন। দেশটি বলেছে, ‘বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এই ধরনের একতরফা কঠোর পদক্ষেপ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করবে না’।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় ইউক্রেনের খাদ্য-শস্যের দাম বেশ কম। রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে গত বছর কৃষ্ণসাগরের বেশ কিছু বন্দর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার পর প্রচুর পরিমাণে ইউক্রেনীয় শস্য মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে আটকা পড়ে।
মূলত ‘লজিস্টিক’ সংক্রান্ত নানা জটিলতার কারণে আটকা পড়া এসব পণ্যের কারণে ওইসব দেশে খাদ্য-শস্যের দাম বেশ অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
রয়টার্স বলছে, গত মাসে ইউরোপীয় কমিশনের কাছে একটি চিঠি পাঠায় পাঁচটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তারা বলেন, শস্য, তৈলবীজ, ডিম, মুরগি এবং চিনির মতো পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির মাত্রা ‘অভূতপূর্ব’ এবং এ কারণে ইউক্রেনের কৃষিপণ্য আমদানিতে সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
এছাড়া পোল্যান্ডে চলতি বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং অত্যধিক সরবরাহের প্রভাব নির্বাচনী বছরে পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (পিআইএস) জন্য একটি রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি করেছে। এমনকি দেশটির অর্থনীতিও স্থবিরতার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
পিআইএস নেতা জারোস্লো কাকজিনস্কি দলের কনভেনশনের সময় বলেন, ‘আজ সরকার যে নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে শস্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আরও কয়েক ডজন অন্যান্য ধরনের খাবারও আমদানি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যগুলোর তালিকায় ‘শস্য থেকে মধু পণ্যসহ অনেক কিছু থাকবে’ এবং সরকারি প্রবিধানে আরও অনেক পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের কৃষি নীতি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, পোলিশ এই নিষেধাজ্ঞা রপ্তানি সংক্রান্ত বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিরোধী। একইসঙ্গে সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য আলোচনার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
ইউক্রেনীয় এই মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বুঝতে পারি যে, পোলিশ কৃষকরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। তবে আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি, ইউক্রেনীয় কৃষকরাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে।’
এদিকে পোল্যান্ডের এই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে শনিবার যোগ দিয়েছে হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সরকার। দেশটি বলেছে, চলমান স্থিতাবস্থা স্থানীয় কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
অবশ্য শস্য-সহ অন্যান্য খাদ্য আমদানির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কখন কার্যকর হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি হাঙ্গেরি।
পোল্যান্ডের কাকজিনস্কি বলেছেন: ‘আমরা ইউক্রেনের অপরিবর্তিত বন্ধু এবং মিত্র রয়েছি। আমরা তাদেরকে সহায়তা এবং সমর্থন করব। … তবে দেশের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করা প্রতিটি রাষ্ট্র, প্রতিটি ভালো কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।’
এছাড়া শস্য সমস্যা নিষ্পত্তি করতে পোল্যান্ড ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন কাকজিনস্কি।