এই ড্রোন হামলায় অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, একটি কিন্ডারগার্টেন ও একটি অ্যাম্বুলেন্স।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে রাশিয়া ৬ হাজার ২৯৭টি দূরপাল্লার ড্রোন ছুড়েছে। জুনের তুলনায় যা প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি।
কিয়েভ ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু জুলাই মাসেই রাশিয়া রেকর্ড ৬ হাজার ১২৯টি শাহেদ ধরনের ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি। গত বছর জুলাইয়ে রাশিয়া মাত্র ৪২৩টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগ্নাট বলেন, প্রকৃত হামলার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ এই হিসাব আনুমানিক।
৯ জুলাই এক রাতেই রাশিয়া পশ্চিম ইউক্রেনে রেকর্ড ৭৪১টি ড্রোন ও ডিকয় নিক্ষেপ করে, যা গত বছরের পুরো জুলাই মাসের চেয়ে বেশি।
সেই দিনের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের সুমি, দোনেৎস্ক ও খেরসন অঞ্চলে অন্তত ৮ জন নিহত হন। যদিও ইউক্রেনীয় বাহিনী সেদিন নিক্ষিপ্ত ড্রোনের মধ্যে ১০টি বাদে সবকটি ভূপাতিত করে।
৯ জুলাইয়ের হামলার ঠিক একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তার প্রশাসন ইউক্রেনকে আরও “প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র” সরবরাহে সহায়তা করবে। এর কয়েকদিন আগেই পেন্টাগন জানিয়েছিল, অস্ত্রের মজুদ কমে যাওয়ায় কিছু সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “তাদের নিজেদের রক্ষা করার সামর্থ্য থাকতে হবে।” তিনি জানান, ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের রেথিওন কোম্পানি থেকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার অর্থ জোগাবে। তিনি যোগ করেন, “তারা এখন খুব ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হচ্ছে।”
মাসজুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত ছিল। ৩১ জুলাই কিয়েভে ভয়াবহ হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৫ শিশু ছিল। আহত হন ১৫৯ জন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ওই হামলায় ৩০০ এর বেশি ড্রোন ও ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এএফপির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে ১৯৮টি ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছে। এ বছর জুন ছাড়া আর কোনো মাসে এত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি।
কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট বলছে, জুন মাসে রাশিয়া ৫ হাজার ৩৩৭টি ড্রোন নিক্ষেপ করে, যা জুলাইয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জুনের ৯ তারিখে ৪৭৯টি ড্রোন হামলা হয়েছিল, যা বন্দী বিনিময়ের আলোচনার ঠিক আগে।
তুরস্কে শান্তি আলোচনা জুলাইয়েও চলেছে, তবে কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। এর মধ্যেই ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, রাশিয়া ও তার রপ্তানি পণ্য কেনে এমন দেশের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
২০২২ সালের আগ্রাসনের পর রাশিয়া তাদের ড্রোনগুলোর উচ্চতা বাড়িয়েছে। এখন এগুলো কয়েক কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়ে, ফলে মেশিনগান দিয়ে নামানো কঠিন হয়ে গেছে। তাই ইউক্রেন আরও বেশি নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর, যার মধ্যে ইউরোপ-অর্থায়নকৃত প্যাট্রিয়ট সিস্টেমও রয়েছে।
রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের ড্রোন পাঠাচ্ছে। অর্ধেকের বেশি ড্রোন বোমা বহন করে। বাকি ডিকয় বা নজরদারি ড্রোন। ডিকয় ড্রোন ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র অপচয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর নজরদারি ড্রোন ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা টিমের অবস্থান শনাক্ত করে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে বড় ড্রোন হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অচল করে ফেলার কৌশলও অবলম্বন করছে রাশিয়া।
রাশিয়া ইরান থেকে ভারী মোহাজের-৬ এবং সস্তা শাহেদ “কামিকাজি” ড্রোন আমদানি করছে। ইরানকে তারা ২০২৪ সালের শেষ দিকে “গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার” হিসেবে বর্ণনা করে।
ইউক্রেন ২০২০-২০২৪ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক হয়ে উঠেছে। তারা স্থানীয় উৎপাদকদের কাছ থেকেও লাখ লাখ ড্রোন কিনছে।