ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছিল ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সন্ধান পাওয়া এই গণকবরের ভেতরে ছিল ৪৪০টি মরদেহ। ইজিয়াম শহরটি রাশিয়ার দখলে ছিল এবং সম্প্রতি পাল্টা হামলা চালিয়ে রুশ বাহিনীর কাছ থেকে শহরটি দখলে নেয় ইউক্রেন।
এরপরই রুশ এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। শনিবার চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যান লিপাভস্কি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে এই ধরনের আক্রমণ অকল্পনীয় এবং ঘৃণ্য।’
শনিবার টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমাদের এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। আমরা সব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির পক্ষে আছি। আমি একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল দ্রুত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই যা (ইউক্রেনে রুশ) আগ্রাসনের অপরাধের বিচার করবে।’
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামে সন্ধান পাওয়া এই গণকবরের ভেতরে ৪৪০টি মরদেহ ছিল। গণকবরে থাকা অনেকের মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্নও ছিল। এছাড়া গণকবরে থাকা নিহতদের অনেকে গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলায় প্রাণ হারান বলে জানান ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সেখানে দাফন করা মৃতদেহ থেকে ‘নির্যাতনের নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে’। তিনি বলেন, ‘খারকিভ অঞ্চলে মুক্ত হওয়া বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে ১০টিরও বেশি নির্যাতন চেম্বার পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের জন্য রুশদের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খুঁজে পাওয়া গেছে। ‘রাশিয়ান ফ্যাসিস্ট’ এর জন্য ‘রাসিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করে জেলেনস্কি বলেন, ‘নাৎসিরা সেটাই করেছে। রাসিস্টরা এটা করে। এবং তাদের একইভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে এবং আদালতের কক্ষে জবাবদিহি করা হবে।’
আল জাজিরার হোদা আবদেল-হামিদ খারকিভ থেকে জানিয়েছেন, ইজিয়ামের পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ স্তরের’ বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইজিয়াম এখন একটি জনশূন্য শহর, সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে কেবল একটি বিল্ডিং আছে যা অন্তত আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, এবং আমি এখানে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর কথা বলছি – অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, স্কুল, ফার্মেসি, গির্জা – সবগুলোই জনশূন্য’।
তার ভাষায়, ‘এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি এই যুদ্ধের আসল অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। এই শহরটি দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি বর্তমানে দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে সৈন্যদের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলেও জীবনের কোনো চিহ্নই নেই।’
এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মুখোমুখি করতে চান।
জার্মান নিউজ আউটলেট বিল্ডের টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘পুতিনকে অবশ্যই এই যুদ্ধে হারতে হবে এবং তার কর্মের মুখোমুখি হতে হবে, এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রধান গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করেন। তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
ফন ডার লেইন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এ বিষয়ে সম্ভাব্য কার্যক্রমের লক্ষ্যে আমরা সাক্ষ্য সংগ্রহের কাজকে এগিয়ে নেওয়াকে সমর্থন করি। এটাই আমাদের আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি, যে আমরা এই অপরাধের শাস্তি দিই। এবং শেষ পর্যন্ত পুতিন দায়ী।’
পুতিনকে একদিন আদালতে হাজির করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন: ‘আমি বিশ্বাস করি এটা সম্ভব।’
ইউক্রেনে তার সফরের সময়, ভন ডার লেইন প্রতিশ্রুতি দেন যে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই দেশটিকে ‘যতদিন সময় লাগে’ সমর্থন দিতে থাকবে ইউরোপ।