দেশে প্রচলিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সন্তানদের পড়াতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের অতি বাণিজ্যিক আচরণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাকরা। তারা বলছেন, ইংরেজি মাধ্যম কারিকুলাম যেহেতু আন্তর্জাতিকমানের এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেজন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তাদের সন্তানদের পড়ান। এই আবেগকে পুঁজি করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো দিন দিন টিউশন ফি বাড়িয়েই চলেছে। এছাড়া বছর বছর রি-এডমিশন ফি নিচ্ছে আদালতের আদেশ এবং সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পেরেন্টস ফোরাম আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ করা হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিছু কিছু বড় স্কুল আবার রি-এডমিশন ফি-কে ১২ মাসের মধ্যে ভাগ করে টিউশন ফি অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ স্কুল রি-এডমিশন ফি ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে মাসিক টিউশন ফি আট হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার কিছু কিছু স্কুলে মাসিক টিউশন ফি ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ভর্তি ফি ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো স্কুলে ভর্তি ফি দুই লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া কিছু কিছু স্কুল ডেভেলপমেন্ট ফি, ইউটিলিটি ফি, বিবিধ ফিসহ বিভিন্ন নামে ফি আদায় করছে।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সার্বিক শিক্ষার মানও দিন দিন কমছে। শিক্ষকরা স্কুলে না পড়িয়ে তাদের নিজেদের কোচিং সেন্টারে যেতে ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করছে। এর ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ইংরেজি মাধ্যম কোচিং সেন্টার। অভিভাবকদের নির্বাহ করতে হচ্ছে স্কুল ফি এবং কোচিং ফি। এসব দেখার মতো কেউ নেই।
লিখিত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আজম খান বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে এমনকি সরকারি নির্দেশার কোনো তোয়াক্কা না করে অত্যন্ত অমানবিক ও অযৌক্তিকভাবে অভিভাবকদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে অসামঞ্জস্যমূলক উচ্চ হারের টিউশন ফি এবং রি-এডমিশন
ফি আদায়ের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সন্তানদেরও মানসিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। যা আমাদের সন্তানদের সাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ফোরাম সভাপতি এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সার্বিক শিক্ষার মানও দিন দিন কমছে। শিক্ষকরা স্কুলে না পড়িয়ে তাদের নিজেদের কোচিং সেন্টারে যেতে ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করছে। এর ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ইংরেজি মাধ্যম কোচিং সেন্টার। অভিভাবকদের নির্বাহ করতে হচ্ছে স্কুল ফি এবং কোচিং ফি। এসব দেখার মতো কেউ নেই।
অভিভাবকদের ৫ দফা দাবি
মিট দ্য প্রেসে অভিভাবকদের সংগঠনটি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো-
১। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর রি-এডমিশন ফি নেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং মাসিক টিউশন ফি যৌক্তিকীকরণ করতে হবে।
২। সরকারি নির্দেশাবলি মেনে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গেজেট মোতাবেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো পরিচালনা করতে হবে।
৩। স্কুলগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দুইজন নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪। জাতীয় বাজেটে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থার জন্যে বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।
৫। সরকারি উদ্যোগে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্থাপন করতে হবে, যাতে করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর মধ্যে একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা গড়ে উঠে এবং শিক্ষার সার্বিক মান বাড়ে।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পেরেন্টস ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের যৌক্তিক দাবি ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইংরেজি মাধ্যম পরিচালিত স্কুলগুলোকে নিবন্ধন ও আইনানুগ ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিশ্চিত করতে দুটি নির্দেশনা জারি করেছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত হয়নি। আমরা আশা করি স্কুলগুলো দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সব সরকারি নির্দেশনা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।
এসব দাবি পূরণে অভিভাকরা শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মাউশির ডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।