রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব কথা বলেন।
আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ওই আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি গঠন করে। অথচ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওই আইন বাতিল করাটাই যুক্তিযুক্ত হতো।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমরা স্পষ্ট লক্ষ করছি, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে। এ কাজ গণঅভ্যুত্থানের কমিটমেন্টের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র ও জনগণ গণঅভ্যুত্থানের শরিক। কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলে ড. মুহম্মদ ইউনূস এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
প্রধান উপদেষ্টা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। ড. ইউনূস দৃঢ়তার সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেবেন। এটাই শিক্ষার্থী, তরুণ সমাজ ও অভ্যুত্থানের শরিকরা প্রত্যাশা করেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের বার্তা বুঝতে পারেন এবং তাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন।
সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, তিন মাসের অধিক ক্ষমতায় থেকে এই সরকার ইতোমধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজের ক্ষেত্র ও সীমা অতিক্রম করেছে। তাছাড়া এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত। কাজেই সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরি ধারণ করতে হবে। সরকার হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই প্রতিশ্রুত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে নির্বাচন নিয়ে তড়িঘড়ি করা যাবে না। এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্পন্ন না করে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিলে এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ তিন মাসের অধিক সময়ে নিষ্পন্ন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে যা সরকারের বৈধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
সামান্তা শারমিন বলেন, ড. ইউনূসকে মনে রাখতে হবে, তিনি ছাত্র-জনতার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। তরুণ শিক্ষার্থী সমাজসহ আপামর জনগণের কাছেই তিনি দায়বদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে সংস্কার হবে না, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য আমরা তার কাছ থেকে শুনতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী কাঠামোর মূলোৎপাটন করতে শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষ জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন, ছয় শতাধিক যোদ্ধা চোখ হারিয়েছেন, হাজারের বেশি যোদ্ধা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। শিক্ষার্থী, তরুণ সমাজ ও জনগণ জীবন দিয়ে যে সরকারকে বসিয়েছে, সেই সরকার দায়িত্বশীল আচরণ করবে বলেই আমরা আশা করি। জনগণ গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। আমরা মনে করি, এখনো সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এই সরকার জনগণের অভিপ্রায়কে প্রতিনিধিত্ব করবে তথা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করার দিকে অগ্রসর হবে না- এটাই আমাদের দাবি। ড. ইউনূস ও তার সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সংবিধানের আইনি কাঠামোয় নির্বাচন দিতে এত শহীদ প্রাণ দেননি। তাছাড়া গণঅভ্যুত্থানের দাবি কেবল নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা বিলোপের লক্ষ্যে সব ধরনের সংস্কার-পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে অভ্যুত্থানের লক্ষ্য অর্জিত হবে না এবং তা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানির শামিল।
নিজেদের দাবি প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাই আমাদের দাবি, অতি দ্রুত গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি চুন্নুকে অপসারণ করতে হবে, ২০২২ সালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশন আইন বাতিল করতে হবে, তার অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রাপ্ত প্রস্তাবের আলোকে নতুন আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।