সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও সংবিধানে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে সরে আসবে না সরকার। অতীতের ন্যায় বিএনপিকে ছাড়াই সরকার এবং আওয়ামী লীগ যথা সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও দুই বছরের বেশি সময় বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়ানো শুরু হয়ে গেছে।
সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। সংবিধান অনুযায়ী এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রেক্ষাপটে বেশ কিছুদিন ধরেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন এবং নির্বাচনকালিন সরকার নিয়ে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে নির্বাচন বিষয়ে তাদের কঠোর অবস্থান প্রকাশ পাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গঠিত হতে যাওয়া আগামী ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি। আগামী নির্বাচন নির্বাচিত দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানেরও দাবি তুলেছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যপারে তাদের অনড় অবস্থানই বার বার তুলে ধরছে।
বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে এছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন হতে দেবেন না বলেও তারা হুমকি দিচ্ছেন।
এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই আমরা একটি নতুন সরকার গঠন করব।
এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।
এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নেতারা বার বার বলছেন তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। মীমাংসিত একটি ইস্যু নিয়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের এমন বক্তব্য আত্মঘাতি প্রবণতা ছাড়া আর কিছুই নয়। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি এখনও পুরোনো এবং সেই ধূসর পথে হাঁটছে। প্রকৃত পক্ষে সময় ও স্রোতের মতো নির্বাচনও কারো জন্য বসে থাকবে না। নির্বাচন তো আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হবে না, হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে তুলে দেওয়ার পর নির্বাচনের সময় নির্বাচিত সরকার অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারই দায়িত্ব পালন করে আসছে। ২০১৪ সালে দশম সংসদ বির্নাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
বিএনপি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে সেটা আর হবে না। তাদের এই অযৌক্তিক দাবির কাছে আওয়ামী লীগ বা সরকার নতি স্বীকার করবে না। এতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সংবিধানে নির্ধারিত সময়েই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতবার বিএনপি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এবার তারা সংবিধানের বাইরে কোনো দাবি করলে সেটা মেনে নেওয়া হবে না। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করতে চেয়েছিলো, এর জন্য সন্ত্রাস, অগ্নি সংযোগ করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। এবারও ঠেকাতে পারবে না। ২০১৪ সালের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও জানান তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের এখনও দুই বছরের বেশি বাকি। তাই এখনই এটা নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। অযৌক্তিক দাবি করে কোনো লাভ হবে না।
কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, এখন আবার নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বুলি আওড়াচ্ছে। তারা জানে তত্ত্ববধায়ক সরকার আর সম্ভব না। ২০১৪ সালেও তারা অংশ না নিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিলো, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। বিশৃঙ্খলা করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন । তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার খালি মাঠে গোল দিতে চায় না, ওয়াক ওভার আমরা চাই না। বিএনপিই জন্মলগ্ন থেকে এ চর্চা করে আসছে। আমরা বিএনপিকে সতর্ক করে বলতে চাই কর্মসূচির নামে সন্ত্রাস কিংবা জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করবে।