কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি তার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিটিং ও মিছিলের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা থেকে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে ফজর আলীকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে। কোনো ছবিতে তারা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন, অন্য ছবিতে খোকনের সঙ্গে ফজর খাবার খাচ্ছেন, আবার এক ছবিতে তিনি আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন।
ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এক পর্যায়ে ফজর আলীকে বিএনপির কর্মী বলে প্রচার করা হলেও স্থানীয়রা তার কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফজর আলী আগে কোনো কাজকর্মে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া খোকনের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতেন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজনের দায়িত্ব পালন করতেন। খোকনের ব্যক্তিগত কাজে সহায়তা করতেন এবং বিভিন্ন টেন্ডার কাজ করে জীবনযাপন করতেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের পর ফজর আলী বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আল আমিন বলেন, ফজর আলী একজন ত্যাগী আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলেন। তিনি খোকন চেয়ারম্যানের বডিগার্ড হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। আন্দোলনের পর খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ কম হলেও বিএনপির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, আমি ফজর আলীকে খুব ভালোভাবে চিনি না। আমি একজন চেয়ারম্যান, আমার সঙ্গে অনেকেই ছবি তোলেন, এর বেশি কিছু নয়।
যেভাবে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন ফজর আলী
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, ফজর আলীর বিএনপির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আওয়ামী লীগ করেন এবং একজন চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন। অনেকেই তাকে বিএনপি কর্মী হিসেবে চালানোর চেষ্টা করছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন রাতে মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ফজর আলীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা করেছেন। তার স্বামী দুবাই প্রবাসী এবং তিনি দুই সন্তানের মা। পুলিশ এই ঘটনায় ভিডিও ভাইরাল করার দায়ে চারজনকে আটক করেছে এবং মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লায় নিয়ে গেছে।