সিলেটে সদ্যসমাপ্ত বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে নানা বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। এ আয়োজনকে বিএনপি সফল বলে দাবি করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন ভিন্নকথা। গণসমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে বিএনপি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দাবি বিএনপির গণসমাবেশে সিলেটের মানুষ সাড়া দেয়নি।
নগরীর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আগের দিন প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীরা আসেন। একদিনের সমাবেশ তিন দিনে রূপ নেয়। আগের দুদিন নগরজুড়ে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হয়েছে। যদিও সমাবেশের আগে বিভাগের তিন জেলা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে দুদিন এবং সিলেটে সমাবেশের দিন পরিবহণ ধর্মঘট ছিল। এ কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা সিলেটে আগেই আসতে শুরু করে। সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চল থেকে নৌকা ও মোটরসাইকেলে লোকজন আসেন। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নেতাকর্মীরা ট্রেনযোগে আসেন।
মাঠের তিনদিকে অস্থায়ী ক্যাম্পে দুই রাত কাটান অনেকে। সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের উপস্থিতি আশা করেছিলেন স্থানীয় আয়োজকরা। তবে গণসমাবেশে লোকজনের উপস্থিতি প্রত্যাশা পূরণ করেনি বলে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, এজন্য তারা একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে-পরিবহণ ধর্মঘট, মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের অনেকে শেষ পর্যন্ত থাকেননি, সংশ্লিষ্ট নেতার নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশস্থলে এলেও একটু পরই তারা চলে যান। এসব কারণে গণসমাবেশের একটি অংশ অধিকাংশ সময় ফাঁকা ছিল। তবে প্রধান অতিথি সমাবেশস্থলে আসার পর মাঠ অনেকটাই ভরে যায়। নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষের উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন আয়োজকরা। রোববার নগরীর একটি হোটেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। সভায় গণসমাবেশের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকী, সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আহমদ, সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব, মামুনুর রশিদ, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, এমদাদ আহমদ চৌধুরী, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, সৈয়দ মঈন উদ্দিন সোহেল, শামীম আহমদ, অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, অ্যাডভোকেট আবু তাহের, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক প্রমুখ।
অপরদিকে সমাবেশ-পরবর্তী বিশ্লেষণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির গণসমাবেশে সিলেটের মানুষ সাড়া দেয়নি। গণসমাবেশ চলাকালে মাঠের এক অংশ ফাঁকা ছিল এবং চৌহট্টা-রিকাবীবাজর সড়কে দিনভর গাড়ি চলাচল প্রমাণ করে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। বিএনপি নেতারা পুরো নগর কানায় কানায় ভরে দেওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মিল পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন বিভাগজুড়ে প্রচারণা চালিয়েও মাঠ ভরতে না পারাই প্রমাণ করে মানুষ বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এর প্রমাণ সিলেটে বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই দেশ নিরাপদ বলে মনে করে সিলেটের মানুষ। এ কারণে সিলেটের মানুষ বিএনপির গণসমাবেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের প্রচার-প্রচারণায় যে গর্জন ছিল সমাবেশে তার প্রতিফলন ঘটেনি।