দেখতে পেলেন, ওয়েবসাইটের ডান পাশে কোনায় এই পেজে কতজন ব্যবহারকারী আছেন, সেটি দেখাচ্ছে। এ ছাড়া কোন ট্রেনে কতজন ব্যবহারকারী আসন খুঁজছেন সেটিও দেখাচ্ছে। বিষয়টি তাকে অবাক করেছে। ভরদুপুরে কোনো আসন ফাঁকা নেই, তারপরও এত মানুষ!
ইমন হাসান বলেন, সকাল ৮টায় ট্রেনের আসনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওই সময়ই ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না, দুপুর বেলায় তো আরও পাওয়া যায় না। তারপরও বিকেল ৩টায় সার্চ করে দেখলাম। দেখে তো অবাক। দেখলাম, শুধু ওই পেজেই ১০ হাজার ৬২৫ জন মানুষ আছেন। এর মধ্যে শুধু পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের আসন সার্চ করছেন এক হাজার ৭১ জনের বেশি মানুষ। এই প্রক্রিয়াটি যদি সঠিক হয়, তবে এটি টিকিট বিক্রিতে অনেকটা স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অবশ্য গত ২৯ অক্টোবরই অনলাইনে ট্রেনের টিকিটিং সিস্টেমে কিছু পরিবর্তন আনার এবং বাড়তি সুবিধা যুক্ত করার আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। তারপরই এই পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে টিকিটের সবচেয়ে চাহিদা ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটের ট্রেনের। এই রুটে দুটি ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেন নিয়মিত যাতায়াত করে। এর মধ্যে পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬) ট্রেনে মোট কোচ রয়েছে ১৬টি। এসব কোচে ঢাকা থেকে মোট আসন রয়েছে ৭১৪টি। এর মধ্যে এসি সিট (বসে যাওয়ার কেবিন) রয়েছে ৯৯টি, এসি চেয়ার রয়েছে ১৬৫টি এবং নন-এসি শোভন চেয়ার রয়েছে ৪৫০টি।
অন্যদিকে, ঢাকা স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ৪০টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রেন কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৪)। এতে কোচ রয়েছে ১৯টি। এসব কোচে ঢাকা থেকে মোট আসন রয়েছে ৭৮৪টি। এর মধ্যে এসি বার্থ (শুয়ে যাওয়ার কেবিন) রয়েছে ৫৪টি, এসি চেয়ার রয়েছে ২২০টি এবং নন-এসি শোভন চেয়ার রয়েছে ৫১০টি।
ট্রেনের টিকিটিংয়ের নতুন সংযোজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে মতও। ফেসবুকের বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যানস ফোরামে একটি ছবি পোস্ট করে শিহাব আবদুর রাকিব নামের একজন লিখেছেন, ‘সিস্টেমটা দারুণ লাগল। আসলেই কাজ করে কি না সেটা দেখার জন্য আমার অ্যাকাউন্ট এবং আপুর অ্যাকাউন্ট থেকে একসঙ্গে সার্চ দিয়েছিলাম।’ তার পোস্টের মন্তব্যের ঘরে এস এম শামীম নামের একজন লিখেছেন, ‘যেখানে সিট থাকে না সেখানেও দেখায় লোক ট্রাই করছে, এটা হাস্যকর।’ সেখানে এটি নিয়ে চলেছে নানা তর্ক-বিতর্ক। তবে সার্বিকভাবে বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যাত্রীরা।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সন্দীপ দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত দুটি পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কোন রুটে কতজন একসঙ্গে সার্চ করছেন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সার্চ করার পর ওই ট্রেনে এই মুহূর্তে কতজন একসঙ্গে আসন বুকিং করার চেষ্টা করছেন। এগুলো গত ৩১ অক্টোবর রাতে সংযোজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কতগুলো আসন আছে এবং নেই সেটি তো আগে থেকেই ছিল। আমাদের আরও কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কতগুলো আসনের টিকিট এই মুহূর্তে ‘বুকিং ইন প্রগ্রেস’ আছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, আমরা টিকিটিংয়ে আরও স্বচ্ছতা আনতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে দুটি পরিবর্তন এসেছে ওয়েবসাইটে। আরও পরিবর্তন আসবে।
তবে গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়ের রুট রেশনালাইজেশন এবং ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, অনলাইনে ট্রেনের টিকিটিং সিস্টেমে কিছু পরিবর্তন এবং বাড়তি সুবিধা যুক্ত হতে যাচ্ছে। একটা প্রেজেন্টেশন হয়েছে। সেখানে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। রেলের টিকিট পদ্ধতি নিয়ে একটা ডায়াগনস্টিক হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রেজেন্টেশনে দেখেছি কমলাপুর থেকে টিকিট চাইলেন, সেখানে নেই। কিন্তু তেজগাঁও থেকে আছে। আবার ৭টার ট্রেনে টিকিট নেই কিন্তু ১০টার ট্রেনে আছে। তবে সেটির কী অবস্থা তা জানা যাচ্ছে না। সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাত্রী যেন এখন থেকে এটা দেখতে পান কখন, কোথায় কোন স্টেশন থেকে টিকিট আছে। সহজ বলেছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এটা ঠিক হবে। না হলে আপনারা অভিযোগ করবেন।
কিন্তু নতুন পদ্ধতি চালুর কয়েকদিন পার হলেও কোন স্টেশন থেকে টিকিট আছে, সেটি এখনও দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেনের টিকিট সংরক্ষণ না রাখার জন্য গত ৩ নভেম্বর টিকিট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভিকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।