ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছেন জেলা প্রশাসক। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে কাজে অনিয়ম পেয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজের পুরোপুরি তদারকিতে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভুইয়াকে প্রকল্পের ১৬৯টি ঘরের কাজ দেন ইউএনও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রাজমিস্ত্রি ও সহকারীরা। জেলা প্রশাসক কাজের সঠিকতা যাচাই করতে গ্রেড ভিম, পিলার, লিন্টারের কিছু অংশ ভেঙে ভেঙে দেখেন। এ সময় তিনি দেখতে পান সঠিক মাপের রড দেওয়া হয়নি। রড কম দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে রডের রিং না দিয়ে অতিরিক্ত দূরে দেওয়া হয়েছে। ইট, বালু, সিমেন্টেও কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে।
অনিয়ম পাওয়ায় সাতটি স্থানের ১৪২টি নির্মাণাধীন ঘরের মধ্যে ৮৮টি ঘরের কাজ বন্ধ করে দেন জেলা প্রশাসক। এসময় তিনি ইউএনও, সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ভর্ৎসনা করেন।
একজন ঠিকাদারকে দিয়ে ১৬৯টি ঘরের কাজ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ইউএনও রুমানা আক্তার বলেন, কিছু কাজে অনিয়ম হওয়ায় জেলা প্রশাসক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আমি। সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী। তিনিই কাজের মনিটরিং করছেন। অনিয়মের বিষয়ে আমাকে কখনো কোনো তথ্য জানাননি। ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূইয়া এবং আক্তার মাস্টার কাজ করেছেন। তারাও যে কাজ খারাপ করবে তা ভাবতে পারিনি।’
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘আমি শুধু মালামাল সরবরাহ করেছি। চাহিদা অনুযায়ী ইট, বালু ও সিমেন্ট দেওয়ার পর আমাদের টাকা সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করে দিয়েছে। কাজ করেছে ইউএনও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। আমার কাজ করার সুযোগ নেই।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তীর মোবাইলে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ততার কথা বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পরিদর্শন শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, আমরা মাঝে মাঝে নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প চেক করে থাকি। সেখানে গিয়ে আমরা কিছু অনিয়ম পেয়েছি। কিছু অনিয়মের পাঁয়তারা যারা করতে চাচ্ছিলো, শুরুতে আমরা তাদের শনাক্ত করে ফেলেছি। এসব সংশোধন করে ঘরগুলো ঠিক করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যাদের দায়দায়িত্ব আছে তারা কেন যথাযথভাবে সেটি করেনি, এই বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং গণপূর্ত বিভাগের একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে।