আশুলিয়া থানার সামনে গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র-জনতার লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সম্পৃক্ত ইন্সপেক্টর আরাফাত হোসেনকে রাজধানীর আফতাবনগর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-৩ থেকে এক খুদে বার্তায় আজ শুক্রবার সকালে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের গা শিউরে ওঠা এক ভিডিও। গুলিবিদ্ধ মরদেহ গুনে গুনে ভ্যানে তুলছেন পুলিশ সদস্যরা। পরে একটি পরিত্যক্ত ব্যানার দিয়ে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।
ভিডিওতে পুলিশের ভেস্ট আর হেলমেট পরা যাদের দেখা গেছে, তাদের একজন ঢাকা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
সেদিন কার নির্দেশে ডিবির টিম আশুলিয়ায় দায়িত্বে ছিল জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর (ডিবি) পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফী স্যারের নির্দেশে সেদিন তারা আশুলিয়ায় ছিলেন। আল্লাহর রহমতে ৫ আগস্ট অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়ে হত্যার রাজত্ব কায়েম করে পুলিশ। ভয়ংকর সেই দিন আর কী কী ঘটেছিল তার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন প্রতক্ষদর্শীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পুলিশের গুলিতে লাশের পর লাশ পড়ছিল। পরে পুলিশ ওই লাশগুলো গাড়িতে তুলে নিয়ে আগুন দেয়। লাশগুলো যেন না পুড়ে, সেজন্য পানি নিয়ে আগুন নেভাতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দিকেও গুলি ছোড়ে। থানার সামনে শুধু রক্ত আর রক্ত!
নিহতের স্বজনরা হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এক নিহতের স্বজন মো. শাহিন বলেন, লাশ পুড়ে যাওয়ার কারণে চিনতে পারিনি। পরে ভিডিও বের হওয়ার পর পোশাক দেখে চিনতে পেরেছি। এ ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে আশুলিয়ায় ঘটনার মূল কারিগর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপার নিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল কাফীকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পাঁচ দিনের রিমান্ডের নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে কাফীকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষে অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম আল ফেসানী পৃথক দুটি অভিযোগ করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সালমান এফ রহমান, আজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, বেক্সিমকো লিমিটেডের সিকিউরিটি ইনচার্জ মেজর (অব.) আরিফ, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২ নস্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মনতাজউদ্দিন মণ্ডল, কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরীফ ব্যাপারী, কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাক আহমদ, কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগের সাবের আহমেদ সজীব, সাবেক এমপি সাইদুল ইসলাম, মো. নাদিম হোসেন, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ, আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস, আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মিজানুর রহমান মিজান, আশুলিয়া থানার এএসআই বিশ্বজিত রায়, আশুলিয়া থানার কনস্টেবল মুকুল, ঢাকা উত্তরের ডিবির পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই মালেক, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই মো. রকিবুল, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই আবুল হাসান, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই হামিদুর রহমান, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই নাসির উদ্দিন, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই আবদুল মালেক, ঢাকা উত্তরের ডিবির এসআই জলিল এবং ঢাকা উত্তরের ডিবির এএসআই সুমন চন্দ্র গাইন।