ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় অপহরণের ১৯ দিন পর আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী হেলাল খানকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি মাইক্রোবাসসহ চার অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
রোববার (৭ আগস্ট) দুপুরে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এর আগে শনিবার (৬ আগস্ট) দিনগত রাতে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই রাতে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় ব্যবসায়ী হেলাল খানকে। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামের মৃত আলিম খানের ছেলে। শিরগ্রামে একটি সুতার মিল রয়েছে হেলাল খানের।
অপহৃত হেলাল বলেন, গত ১৮ জুলাই রাতে আমাকে বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু ফোন দিয়ে ডেকে নেন। বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাসে উঠানো হয়। জিল্লু আমাকে বলেন, চল ঘুরে আসি। এরপর গাড়িতে ওঠামাত্রই আমার হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। বিভিন্ন স্থান ঘুরে আমাকে নিয়ে রাখা হয় একটি ঘরে। আমি জানালা খুলে ওই এলাকার দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারি খুলনায় আছি। পরদিন জিল্লু আমাকে তার আড়পাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে আটকে রেখে আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি বলেন, এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে যায়। এরই মধ্যে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জিল্লুসহ তার সহযোগীরা। আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। বাড়ি থেকে কেউ ফোন দিলে তারা লাউড স্পিকারে কথা বলাতো। ওরা শিখিয়ে দিতো যে আমি ব্যবসার কাজে বাইরে আছি। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পারেনি। এরই মাঝে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার সই নেওয়া হয়। এছাড়া কয়েকটি চেকের পাতায়ও সই করিয়ে নেয় জিল্লুসহ তার লোকজন। প্রতিদিনই আমাকে মারধর করা হতো।
হেলাল খান জাগো নিউজকে বলেন, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করে দেয় ওরা। প্রায় ১২ লাখ টাকায় মেশিন বিক্রি করে দেয়। আমাকে দিয়েই বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে মেশিন বিক্রির কথা বলায়। কাস্টমার আসলে ওরা মিলে গিয়ে তাকে মেশিন বুঝিয়ে দিয়ে ওদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েক মাস আগে বানা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন জিল্লু। আওয়ামী লীগ করায় বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। সর্বশেষ আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় অপহরণকারী জিল্লুর। আমার বড় ভাই থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি জানালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ আমাকে জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু বানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য। জিল্লু ও হেলাল খান দূর সম্পর্কের শ্যালক দুলাভাই। দুজনের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। ঘটনার সত্য-মিথ্যা তারা ও প্রশাসন ভালো বলতে পারবেন।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এসময় জিল্লুসহ (৪৫), বোয়ালমারী উপজেলার ছুলনা গ্রামের পংকজ রায় (৪৩), চরনারানদিয়া গ্রামের রাকিব শেখ (৩২) ও আড়পাড়া গ্রামের মো. নিশানকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়।
ওসি আরও বলেন, উদ্ধার অভিযানে একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি মাইক্রোবাস, দুটি মোবাইল ফোন ও সোনালী ব্যাংকে টাকা জমার একটি রশিদ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।