স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, আমরা যখনই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিই, সরকার বলে আমরা নাকি ভায়োলেন্স করবো। অথচ আওয়ামী লীগের আমলে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে দেশের ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোশাররফ বলেন, ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আমরা ১০ দফা দিয়েছিলাম। ১০ দফার মূলকথা ছিল, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করতে হবে। অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। এদেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। মানুষ যেন নিজের হাতে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, যেন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
‘বিএনপি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্নভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করছে। তাদের সত্যের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের কথা বলে দেশের জনগণকে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা দিনের ভোট রাতে করে গত ১৪ বছর ধরে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। দেশের রাষ্ট্র কাঠামো এক এক করে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ।
তিনি আরও বলেন, ’৭২ থেকে ’৭৫- এসময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। সেসময় তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে, বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। এদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে তারা লুটপাটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করেছিল।
এসময় তিনি আওয়ামী লীগের আমলে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে দেশের ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করার পাশাপাশি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। আজকে আলোচনা করবেন না, উনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলবেন না! উনার মন মতো উনি নির্বাচন করবেন!
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, ২০১৪ এবং ২০১৮ সাল ভুলে যেতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন হলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেটা যদি আপনি (প্রধানমন্ত্রী) না করেন তবে ৫২, ৬৯, ৯০ এর মতো আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইনশাল্লাহ্ জনগণের সরকার নির্বাচিত হবে। সেই সরকার হবে বিএনপি সরকার।
সভাপতি বক্তব্যে মহিলা দলের সভাপতি মির্জা আফরোজা আব্বাস বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগের বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে সরকার ক্রাকডাউন করে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তারা সমাবেশ বানচাল করতে চেয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। এ সরকারের আমলে নারীরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে। নারীদের চোখে জল তাদের গুম, খুন ও গ্রেফতার হওয়া স্বামী-সন্তানদের জন্য। গুলি করে আমাদের ভাইদের হত্যা করছে সরকার। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা আর ভয় করি না।
মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় বিএনপির গ্রেফতার হওয়া সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।