মুক্তিপণ না পেয়ে রুবেলসহ তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করেন অপহরণকারীরা। পরে মরদেহ পুড়িয়ে আলামত নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়। এ কারণে মরদেহগুলো অর্ধগলিত। সোনালী ডাকাতকে আটকের পর তার স্বীকারোক্তিতে মরদেহগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। ডাকাত সোনালীর দেওয়া তথ্যে বুধবার রাতেই এমরুল কবির (৩০) ওরফে ফইরা নামে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মে) দুপুরে র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ অধিনায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন এসব বিষয় উল্লেখ করেন।
আটক সৈয়দ হোসেন ওরফে সোনালী ডাকাত মোচনী ক্যাম্পের ব্লক-ই এর বাসিন্দা আবু সামাদের ছেলে এবং আর এমরুল করিম ওরফে ফইরা (৩০) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিলের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে।
র্যাবের দাবি, আটকদের মধ্যে সোনালী ডাকাত এ তিনজনকে অপহরণের মূলহোতা।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, পাত্রী দেখার লোভ দেখিয়ে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল (৩৫) ও তার দুই বন্ধু ইমরান ও ইউসুফকে টেকনাফে নেন সোনালী ডাকাত। পরদিন রুবেলের মোবাইল থেকে অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারকে ভয় দেখাতে নিযার্তনের একটি ভিডিও তাদের কাছে পাঠানো হয়। ঘটনাটি জানানোর পর র্যাব অপহৃতদের উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়।
তিনি জানান, র্যাব নির্যাতনের ফুটেজ থেকে অপহরণকারী চক্রের একজনকে শনাক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালায়। সর্বশেষ গত ২৪ মে টেকনাফ হাবিরছড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের মূলহোতা সোনালী ডাকাতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় তার অন্যান্য সহযোগীরা কৌশলে পালিয়ে যায়।
আটকের পর সোনালী র্যাবকে জানান, অপহৃতদের গুলি করে হত্যা করার পর পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে মরদেহগুলো আগুনে পুড়িয়ে আলামত ধ্বংস করারও চেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনায় আটক সোনালীকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের একাধিক দল দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে অপহরণকারী চক্রের আস্তানায় পৌঁছায়। আস্তানার পাশে একটি স্থানে দুইটি গলিত মরদেহ ও ওই স্থান থেকে কিছুটা দূরে আরও একজনের গলিত মরদেহ পাওয়া যায়।
মরদেহগুলো অপহৃত রুবেল, ইমরান এবং ইউসুফের বলে জানিয়েছেন আটক সোনালী।
র্যাবের কাছে সোনালী আরও জানান, বিভিন্ন সময় অপহৃতদের ধরে এই আস্তানায় নির্যাতন চালানো হতো এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমের পরিবারে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। আর দাবিকৃত টাকা না পেলে হত্যা করে পাহাড়ি এলাকায় ফেলে দিতেন তারা।
সোলালীর তথ্যমতে রাতেই আটক করা হয় ফইরাকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিসিআর-এ গ্রেফতার দু’জনের নামে কোনো মামলা কিংবা অপরাধের রেকর্ড নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক বলেন, পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহরণ হয়েছে নাকি মাদক বা অন্যকোনো বিষয় এখানে লুকায়িত তা তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে।
শতভাগ মাদক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন দাবি করে তিনি আরও বলেন, মাদক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সব শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি আমরা অপরাধীকে শনাক্ত করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন শুধু মাদক বাহকদের পাচ্ছি। মামলা না থাকায় গডফাদারদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে মাদকের যে তালিকা রয়েছে তা ধরেই নাম আসা গডফাদারদের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।