লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার জামিরবাড়ি গ্রামে সোহান মিয়া (১৪) নামে এক কিশোরকে চুরির অভিযোগে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে আহত সোহান মিয়াকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সে চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, সোহানের মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ৫-৬ মাস বয়সী সোহানকে রেখে নিখোঁজ হন। এরপর তার বাবাও বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। পরে মামা আনিছার রহমান সোহানকে নিজের কাছে রাখেন। বর্তমানে সোহান কখনো গ্রামে আইসক্রিম বিক্রি করে কখনো বা ঘাস বিক্রি করে আয় করে। সম্প্রতি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিল সে। রোববার (২ এপ্রিল) গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল সোহান। ব্যাঙ্গেরহাট এলাকায় পৌঁছালে টিউবয়েলের একটি সকেট রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে হাতে নেয় সে। এ সময় স্থানীয় ইসমাইলের ছেলে ওহাব মিয়া, সুভাসের ছেলে তাপস ও আজিজুলের ছেলে রানা মিয়াসহ কয়েকজন তাকে চোর সন্দেহে আটক করেন।
পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে সোহানকে রশিতে বেঁধে মারপিট করেন তারা। একপর্যয়ে প্লায়ার্স দিয়ে তার শরীরের চামড়া টান দেন। সোহানকে বাঁশ ডলা (দুই বাঁশ দিয়ে শরীর চেপে ধরা) দেয় নির্যাতনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা কেউ একজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এতে খবর পেয়ে কিশোর সোহানের মামা আনিছার রহমান ভোটমারী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত সোহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে ভর্তি আহত সোহান মিয়া বলে, টিউবয়েলের একটি সকেট রাস্তায় পড়ে দেখে আমি হাতে তুলে নেই। ওই সময় আমাকে কয়েকজন চোর আখ্যা দিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে মারপিট করে। আমি চুরি করেনি, এ কথা বলার পরও হাত-পা বেঁধে প্লায়ার্স দিয়ে শরীরের চামড়া টেনেছে আমার। এমনকি হাতে পায়ে ধরলে ক্ষমা না করে বাঁশ রেখে ডলা দিয়েছে। আমার নানি ও মামা ছাড়া কেউ নেই। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।
সোহানের মামা আনিছার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ব্যাঙ্গেরহাট এলাকার ইসমাইল হাজীর ছেলে ওহাব মিয়া, স্কুলশিক্ষক তাপস কুমার ও রানা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাছের ঘেরে নিয়ে আমার ভাগ্নের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। তাকে ছোট থেকে আমি বড় করেছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে এই বয়সে আইসক্রিমের ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছি। সামান্য জিনিস নিয়ে এভাবে নির্যাতন করবে আমি মেনে নিতে পারছি না। আমরা গরিব বলে কি বিচার পাব না।
তিনি আরও বলেন, আমি ন্যায়বিচার পেতে সোমবার (৩ এপ্রিল) থানায় তিনজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আশা করছি পুলিশ দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করবে।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম গোলাম রসুল জানান, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। বিষয়টি ফেসবুকে আসার কারণে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে।