শনিবার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক এই ঘোষণা দেন। প্রেস ব্রিফিংটি সঞ্চালনা করেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। বিগত পনের বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অন্যতম। আমাদের প্রায় সকল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ফ্যাসিবাদী রেজিমের প্রধান শেখ হাসিনা আমাদের সংগঠন ও নেতৃত্বকে সরাসরি টার্গেট করেছিলেন।
তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজপথে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক ঐক্যকে নস্যাৎ করা যাবে না। বর্তমানে যে রাজনৈতিক সমন্বয়ের ধারা চলছে— যেখানে কেউ কাউকে উৎখাত করছে না, দমন করছে না— এটা যেন বজায় থাকে। কেউ যদি আওয়ামী লীগীয় ঐতিহ্যে ফিরে গিয়ে দমন-উৎখাতের রাজনীতি করে, তাহলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবে এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশের ভেতর থেকেই বাংলাদেশের মানুষের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে— এটা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র যেন আর ফিরে না আসে, সে বিষয়ে আমাদের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, নির্বাচনী কাঠামোর যেসব বিষয় এখনো অমীমাংসিত, তা দ্রুত জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। সংসদের দ্বিকক্ষীয় কাঠামোর বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও, উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ কিভাবে গঠিত হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
পিআর সিস্টেম সম্পর্কে খেলাফত মজলিসের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা আংশিক পিআর সিস্টেম চাই। বর্তমান ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। তাই ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচনে আংশিক পিআর সিস্টেম নিম্নকক্ষে ও পূর্ণ পিআর সিস্টেম উচ্চকক্ষে চালু করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিশ্বাস করে, দেশের স্বার্থে একটি শক্তিশালী ও গঠনমূলক বিরোধী দল থাকা প্রয়োজন। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না ইনশাআল্লাহ।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামি ঐক্যকামী শক্তি। প্রতিষ্ঠার পরপরই দল বৃহত্তর ইসলামি জোট গঠন করেছিল। আজও আমরা সেই ঐতিহ্য ধারণ করি।
স্থানীয় নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনও হতে হবে জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
প্রেস ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাওলানা মামুনুল হক।
প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে সকাল ১০টা থেকে একই মিলনায়তনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচিতি ও ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারাদেশ থেকে রিকশা প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী তিন শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের নির্বাচন, রাজনীতি ও দলীয় আদর্শ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।