ইউক্রেন-রাশিয়া এই দুই দেশের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এজন্য এই যুদ্ধ বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারা মনে করছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে বিকল্প ভাবতে হবে। ইতোমধ্যে সেটা নিয়ে কাজও শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধ বেশি দিন স্থায়ী না হলে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তবে যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। কয়েক দফা দুই দেশ আলোচনার টেবিলে বসলেও এখনও আসেনি কোনো সমাধান। আর যুদ্ধ স্থায়ী হলে বাংলাদেশকে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেনের বিকল্প ভাবতেই হবে।
আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১১০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশের গমের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। প্রতি বছর এই দুটি দেশ থেকে প্রায় একশ কোটি টন গম বাংলাদেশে আসে। সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশই আসে এই দুটি দেশ থেকে। বাংলাদেশের মোট ভুট্টার চাহিদার ২০ শতাংশ আসে দেশ দুটি থেকে। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং এক লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদানি করে। বিশ্ববাজারে এখন প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১১৫ ডলার পর্যন্ত ওঠেছে।
তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে যে দামে জ্বালানি তেল কিনে বাংলাদেশ নিজেদের বাজারে বিক্রি করছে, তাতে প্রতিদিন ১৫ কোটি ডলারের ওপর লোকসান গুনতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত বছরেই ডিজেলের দাম এক দফা বাড়িয়েছে সরকার। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে। এর প্রভাবে আমাদের পরিবহনের ভাড়া বাড়বে। কৃষি উৎপাদনেও খরচ বাড়বে। যার প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণের ওপর পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত আমদানি হচ্ছে তুলা, গম, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডাল। দেশে বছরে গমের চাহিদা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টনের মধ্যে ৩৫ লাখ টন আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এই গম প্রক্রিয়াজাত করে ময়দা, আটা, সুজিসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ইতোমধ্যে বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাশিয়া, ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েছেন।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে রাশিয়ায় রফতানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি। আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য, যার বেশিরভাগটাই খাদ্যপণ্য। এর আগের বছর রাশিয়ায় বাংলাদেশ রফতানি করেছিল ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য, অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৭৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য। বিশেষ করে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টার ২০ শতাংশ আসে এই দুটি দেশ থেকে। আবার তৈরি পোশাক রফতানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকেও। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রভাব এর মধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তাদের ব্যবসার ওপর।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে প্রতি বছর আমাদের দেশে টন গম আমদানি করা হয়। বর্তমানে চলমান যুদ্ধের কারণে সেটা বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যান্য যে মালামাল রাশিয়া থেকে আমরা এনে থাকি এই পরিস্থিতিতে তাও হুমকির মুখে। যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বাড়ছে, সেটারও একটা প্রভাব বাজারে পড়বে। এজন্য রাশিয়া-ইউক্রেনের বিকল্প ভাবতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ গোলাম হাফিজ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দ্রুত সমাধান না হলে এই সংকটের বড় প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে তার প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পড়ে। প্রভাবটা কত ব্যাপক হবে, সেটা নির্ভর করবে এই সংকট কতদিন ধরে চলে, তার ওপরে। যদি নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সেটার মাত্রা বাড়তেই থাকবে। তখন তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে ওঠবে।’
ড. কিউ দোংয়ু বলেন, ইউক্রেনে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করুন। বিশ্বজুড়ে, সংঘাতের কারণে আরও অনেক লোককে দারিদ্র্য এবং ক্ষুধার সম্মুখীন হবে এবং আমাদের অবশ্যই তাদের জন্য সময়োপযোগী এবং সু-লক্ষ্যযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি করতে হবে।