আকুর বিল পরিশোধের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আবারও ২০ বিলিয়নে নেমেছে। আইএমএফসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাওয়ার পর গত সপ্তাহে যা ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। একইসঙ্গে নিট রিজার্ভ ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন থেকে নেমেছে ১৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়নে।
বুধবার (১০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এখন গ্রস রিজার্ভ ২৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ মেথডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের সঙ্গে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন।
এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়। প্রকাশ করে না। তবে জুনের শেষ দিকে আইএমএফের ঋণ সহায়তা পাওয়ার পর দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সময় (৩০ জুন) শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৬৭৭ কোটি মার্কিন ডলার। এখন থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর এনআইআর থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার কমে যাবে; অর্থাৎ দেশে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ কমে ১৫ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে। প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।
সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান— সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও গতমাসে আকুর বিলও পরিশোধ হয়েছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম এসব কারণেই মূলত রিজার্ভ কমছে।
মূলত প্রবাসী আয়, রফতানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়ে থাকে, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যুক্ত হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করে আইএমএফ। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ মোট ঋণ নিচ্ছে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ডিসেম্বরে। মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে।