দ্বিতীয়বারের মতো আবারও পেছালো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার সাক্ষ্য গ্রহণ। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) কিশোরগঞ্জ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য্য তারিখ থাকলেও একজন আসামি অনুপস্থিত থাকায় সাক্ষ্য নেয়নি আদালত। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ পেছানো হয়েছে।
আগামী ২৯ আগস্ট আবারও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. বিল্লাল হোসেন জানান, জেল সুপার ও কারা মহাপরিদর্শককে আগামী ধার্য্য তারিখে আসামিদের আদালতে উপস্থিত করার জন্য বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক আদেশ দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু বলেন, জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে পাঁচজন আসামি বিচারাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। কিন্তু মো. সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল অন্য একটি জঙ্গি মামলায় রাজশাহী কারাগারে থাকায় আইনি বাধ্যবাধকতায় আদালতে হাজির হতে পারেনি। যার কারণে ধার্য্য তারিখে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। মূলত আসামিদের কারণে মামলাটি বিলম্বিত হচ্ছে। পরবর্তী ২৯ আগস্ট আবারও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। আদালতে অন্য আসামি ও মামলার বাদীসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। আশা করছি আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে। এর আগে গত ৬ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য্য তারিখ ছিল।
আসামিরা হলেন—জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাস ওরফে জাহিদ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মোঃ সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল, মাহফুজ ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে নুরুল্লাহ, জাহেদুল হক ওরফে তানিম ও আনোয়ার।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে যখন লাখো মুসল্লি পবিত্র ঈদের জামাত পড়তে একত্রিত হয়েছিল। সবাই ইমামের বয়ান শুনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। ঠিক সে সময় মাঠের কিছু দূরে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে জঙ্গিরা পুলিশের নিরাপত্তা চৌকির উপর গ্রেনেড হামলা চালায়। এসময় নির্মমভাবে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশের দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হককে। পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ চলে অনেকক্ষণ। জঙ্গি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পাশের বাসায় রান্নাঘরে রান্না করা অবস্থায় গৌরাঙ্গ ভৌমিকের স্ত্রী গৃহবধু ঝর্ণা রাণী ভৌমিক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর পুলিশের গুলিতে জঙ্গি আবির রহমান নিহত হন।
জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় আটজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছিল। ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বাদি হয়ে জঙ্গী শফিউল ইসলাম ও জাহিদুল হক তানিমের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা জঙ্গিদেরকে আসামী করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মোট ২৪ জন আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে ১৯ জন মারা গিয়েছেন।
মারা যাওয়া আসামিদের বাদ দিয়ে এ ঘটনায় পুলিশ ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঁচজনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করে।