নেতাকর্মীদের ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে পাঠানোসহ নানা অভিযোগ তুলে সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ বিনির্মাণের লক্ষেই চলমান আন্দোলন এবং জনগণের এই আকাঙ্খা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
রোববার (১২ মে) দুপুরে দলের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত বুধবার (৮ মে) রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন। ওই বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী নেতাকর্মীদের পূর্বে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় একতরফা শুনানি করে অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করার প্রক্রিয়াকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে অবৈধ সরকারের সাজানো নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করে বিরাজনীতি করণের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করার জন্য বিচার প্রক্রিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সাজা প্রদান করা হচ্ছে। সভা অবিলম্বে এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বিচার প্রক্রিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি বলছে, দেশে যে ভয়াবহ সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি দলের সমর্থকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঋণ খেলাপী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যেহেতু এই সরকারের কোনও স্তরেই কোনও জবাবদিহিতা নেই, সেহেতু লাগামহীনভাবে ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, জনগণের অর্থ লোপাটের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোত্র তৈরি করা হচ্ছে। যারা এই অবৈধ সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে।
সভায় অবৈধ তথ্য-প্রবাহে বাধা দানের প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হয় এবং অবিলম্বে অবৈধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতের লক্ষে সকল প্রকার অসাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সভায় সম্প্রতি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অথচ এসব রোগ মোকাবিলায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে গত মার্চ মাসে সিপিডির একটি রিপোর্টেও জনস্বাস্থ্যের এক ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারছেন না। গত মার্চ মাসেই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ/বিএফএসএ’র শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করছে। এই ক্যনসারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।
বিএনপি বলছে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবৈধ সরকার কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে? জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এই সরকার কেন এত উদাসীন। জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে দেশের নাগরিকদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য যোগান দেওয়া, অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পণ্যের মান যাচাই করে নেওয়া। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ/বিএফএসএ কিংবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য বাজারে ছাড়া উচিত নয়। তবে দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বর্তমান তাবেদার সরকার আমদানি করা খাদ্যপণ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কিনা এ ব্যাপারে জনগণ যথেষ্ট সন্দিহান। সুতরাং, আমদানি করা পণ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া গেলে প্রতিটি নাগরিককে নিজের এবং নিজেদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থা রক্ষায় নিজ উদ্যোগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এগুলো কোনো একটি দেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক সরকারের একটি রুটিন ওয়ার্ক। তবে অগণতান্ত্রিক সরকার এসব তথাকথিত উন্নয়ন হিসেবে প্রচার করে জনগণের অন্য সকল অধিকারকে অবজ্ঞা করে চলছে। কেবলমাত্র আর্থিক কিংবা অবকাঠামোগত ফাঁপা উন্নয়ন রাষ্ট্র বা সমাজের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না।