শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দেওয়া অন্তবর্তীকালীন রায়ে আদালতের প্রেসিডেন্ট মার্কিন বিচারক জে দোঙ্গু বলেন, ‘আদালত ইসরায়েলকে নির্দেশ দিচ্ছে, গাজায় গণহত্যা সংঘটিত যেন না হয় সেজন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয়তা ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রায়ে আদালত ইসরায়েলকে আরও নির্দেশ দেন, ‘সেনারা যেন কোনো ধরনের গণহত্যা সংঘটিত না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং গণহত্যার নির্দিষ্ট (অভিযুক্ত) প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে।’
রায়ে আরও বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছতে দিতে হবে এবং গাজার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে।’ এছাড়া ত্রাণ পৌঁছানো এবং গণহত্যা প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে এক মাসের মধ্যে আদালতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দখলদার ইসরায়েলকে।
তবে যেটি ধারণা করা হয়েছিল, গাজায় ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ আদালত দেবেন; সে ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
আইসিজে-এর বিচারক জে দোঙ্গু এর আগে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে করা মামলায় রায় দেওয়ার এখতিয়ার এ আদালতের রয়েছে এবং ইসরায়েলের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা এই মামলা খারিজ করে দেবেন না।
গাজায় আগ্রাসন ও গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে গত বছরের শেষের দিকে আইসিজেতে মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুতে আদালতে মামলাটির দুই দিনের শুনানি হয়।
শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়। এছাড়া, জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষার তাগিদও দেওয়া হয়।
অবশ্য ইসরায়েল আদালতকে এই মামলাটি সরাসরি খারিজ করে দিতে বলেছিল। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, তারা আশা করছেন- জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ‘এই মিথ্যা এবং বিশেষ অভিযোগগুলোকে ছুড়ে ফেলে দেবে’।
দক্ষিণ আফ্রিকা দুই সপ্তাহ আগে অভিযোগ করে, ইসরায়েলের আকাশ ও স্থল আক্রমণের লক্ষ্য গাজার ‘জনসংখ্যাকে ধ্বংস’ করা।
আইসিজে তার অন্তবর্তীকালীন রায়ে আরও বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে; সেসব অভিযোগের সঙ্গে কিছু বিষয়ের মিল রয়েছে। এ কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ মামলা চলবে।
বিচারক জে দোঙ্গু তার রায়ে আরও বলেন, তারা ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নোট করেছেন। যার মধ্যে তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের ৯ অক্টোবরের একটি বক্তব্য পড়ে শোনান। ওই বক্তব্যে গ্যালান্ট বলেন, তিনি গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেনাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি মন্তব্য করেন গাজায় ‘অমানুষদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন তারা।