পরিদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল, বিল অব এন্ট্রিতে যা উল্লেখ আছে, সে অনুযায়ী বাস্তবে পণ্য আনা হয়েছে কি না, তা যাচাই–বাছাই করা। ওই চালানের আমদানিকারক যশোরের মা এন্টারপ্রাইজ। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর ধৃতি ইন্টারন্যাশনাল পণ্যের চালানটি পাঠায়। শুল্ক কর্মকর্তারা কায়িক পরীক্ষাকালে দেখতে পান, চালানটিতে যেখানে স্ক্রু আনার কথা ছিল, সেখানে এসেছে নানা ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী। যেমন হাড় কাটার মেশিন, ড্রিল মেশিন। আয়রন বা ইস্তিরির বদলে এসেছে ছয়টি রুটি মেকার। প্রেশারকুকার হয়ে গেছে রাইসকুকার। এ ছাড়া ওই চালানে ২২ কেজি ভায়াগ্রা উপাদানও পাওয়া যায়। এরপর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমিন ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্সের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
অ্যালুমিনিয়ামের বদলে শাড়ি–লেহেঙ্গা–পাঞ্জাবি
সাধারণত নির্মাণসামগ্রী হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম আমদানির কথা বলে আমদানিকারক এনেছেন শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি–পিস, পাঞ্জাবি, থান কাপড় ইত্যাদি। অ্যালটেক অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৩ হাজার কেজি অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে। গত বছরের ৯ নভেম্বর ওই আমদানিকারকের পক্ষে বেনাপোলের ট্রিম ট্রেড নামক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। ১২ নভেম্বর নির্ধারিত শুল্ক-কর দিয়ে পণ্য খালাস করে ট্রাকটি বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকা পেরিয়ে যাচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দারা পণ্যবাহী ট্রাকটি ফটক থেকে আটক করে কাস্টমস শেডে নিয়ে যান। পরে ১৫ নভেম্বর ট্রাকের পণ্য খুলে আলুমিনিয়ামের পাশাপাশি ২৫৪টি ভারতীয় শাড়ি, ১৮৬টি থ্রি–পিস, ৩৭টি লেহেঙ্গা, ১৬টি পাঞ্জাবি এবং থান কাপড় ও ফল পাওয়া যায়। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আনার পাশাপাশি শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টার কারণে ওই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টেরও লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
ব্লিচিং পাউডার হয়ে গেল কফি
বাংলাদেশে ভারতীয় শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি–পিস বেশ জনপ্রিয়। বৈধ পথের পাশাপাশি অবৈধভাবে আসে এসব জামাকাপড়। এমন একটি চোরাচালান করেছে যশোরের রিড এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ভারত থেকে সাত হাজার কেজি ব্লিচিং পাউডার আমদানি করে। কিন্তু ব্লিচিং পাউডারের বদলে এসেছে কফি। গত বছরের নভেম্বরে ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, চারপাশে গন্ধ ছড়ানোর কারণে এসব ট্রাক খালাসের সময় অন্য পণ্যের চালান বন্ধ থাকে। ব্লিচিং পাউডারের ট্রাক খালাস করার সময় রিড এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রিয়াঙ্কা ইন্টারন্যাশনাল বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু ওই চালানে এসেছে মাত্র সাড়ে চার হাজার কেজি ব্লিচিং পাউডার। বাকি ব্লিচিং পাউডারের বদলে কফি ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য আনা হয়েছে। এর মধ্যে কফি ৩৬০ কেজি এবং রাসায়নিকের পরিমাণ এক টনের বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার সময়ে অব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। তারা ওই পার থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাকের ভেতরে অবৈধ পণ্য ঢুকিয়ে দিত। কোনোটি ধরা পড়ত, কোনোটি পড়ত না। এ নিয়ে আমরা বেনাপোল শুল্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। এখন এভাবে চোরাচালানে পণ্য আনা-নেওয়া কিছুটা কমেছে।’ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আনা নতুন কিছু নয়। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরেই বেনাপোল কাস্টমস হাউস দিয়ে নানা কৌশলে অবৈধভাবে পণ্য আনা হচ্ছে। তবে করোনার সময় এভাবে পণ্য আনা বেড়ে যায়। এমনকি গত দেড় বছরে মিথ্যা ঘোষণায় একাধিক চালানে ভায়াগ্রার উপাদানও আনা হয়েছিল। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একশ্রেণির আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, সরকারি কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ আছে।